ব্যুরো নিউজ ২ জুন : আগামী ৭ জুন পালিত হবে ইদ-উল-আজহা অথবা বকরি ইদ। প্রতিবারই এই দিনে কলকাতার রেড রোডে নমাজ পাঠের আয়োজন করা হয়। তবে এবার এই নমাজ পাঠ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। অবশেষে সেই সংশয় কাটল। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই জট কেটেছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন খিলাফত কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান।
রেড রোডে ইদের নমাজ: একটি দীর্ঘদিনের প্রয়াস
দীর্ঘদিন ধরেই রেড রোডে ইন্দিরা গান্ধি সরণিতে ইদের নমাজ পাঠের আয়োজন হয়। এটি কলকাতার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশ। এই স্থানে বড় জনসমাগমের জন্য সেনার অনুমতির প্রয়োজন হয়, কারণ রেড রোড সামরিক এলাকার অন্তর্গত।
সেনার নিষেধাজ্ঞা এবং অনিশ্চয়তা
তবে এবার এই জমায়েত নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেনার তরফে জমায়েতের অনুমতি বাতিল করা হয়। সেনার এক কর্তা চিঠি দিয়ে সেকথা জানিয়েও দিয়েছিলেন নমাজের আয়োজক খিলাফত কমিটিকে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইদের নমাজ রেড রোডে হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ: জট কাটল
ইদের নমাজ ঘিরে অনিশ্চয়তা নিয়ে রবিবার ৮, জাকারিয়া স্ট্রিটে খিলাফত কমিটির অফিসে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে হাজির ছিলেন সংগঠনের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ, সদস্য মুহাম্মদ খলিল, ইরফান আলি তাজ, ইসহাক মল্লিক, মোমতাজ খান। বৈঠক থেকেই রাজ্য সরকার এবং সেনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন বলে জানিয়েছেন জাভেদ খান।মন্ত্রী বলেন, “রেড রোডে ইদের নমাজকে কেন্দ্র করে এবারে একটা টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পারার পরই আমরা সেনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজে হস্তক্ষেপ করেছেন। সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনে এবারেও নির্দিষ্ট দিনে সকাল সাড়ে ৮টার সময় রেড রোডেই হবে ইদের নমাজ।”
বিতর্ক: হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের প্রসঙ্গ
অনেকেই এই ঘটনাকে গত হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের অনুমতি সংক্রান্ত বিতর্কের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেসময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে কলকাতা এবং হাওড়ার মতো অঞ্চলে, বিশেষ করে রেড রোডে হনুমান জয়ন্তীর মিছিলগুলির পুলিশি অনুমতি প্রাপ্ত হয়নি । প্রশ্ন উঠেছে, কেন একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সমাবেশের জন্য এত দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ এবং অনুমতি মিলল, যেখানে অন্য একটি সম্প্রদায়ের (হনুমান জয়ন্তী) মিছিলকে অনুমতি পেতে বা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে? এই ঘটনাকে রাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ‘ পক্ষপাতদুষ্ট ‘ আচরণের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে । বিভিন্ন মতে, এটি রাজ্যে ধর্মীয় সমাবেশের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি প্রতিফলিত করে এবং সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার সমান অধিকারের প্রশ্ন তোলে। এই বিতর্ক শুধুমাত্র ইদের নমাজকে কেন্দ্র করে নয়, বরং রাজ্যের ধর্মীয় সহাবস্থান এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বৃহত্তর আলোচনাকে উস্কে দিয়েছে।