ব্যুরো নিউজ ৩ জুন : রাম জন্মভূমি অযোধ্যায় আজ থেকে শুরু হলো এক যুগান্তকারী অধ্যায়—তিন দিনব্যাপী রাম দরবার প্রাণ প্রতিষ্ঠা মহোৎসব। গত বছরের ২২ জানুয়ারিতে রাম লালার দৈবিক প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর এটি আরও একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই মহাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে কেবল রাম দরবারই নয়, রাম মন্দির কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে নবনির্মিত আটটি মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহও স্থাপিত হবে। এটি মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের সমাপ্তি এবং গঙ্গা দশেরার পুণ্য তিথিতে, আগামী ৫ জুন এই উৎসবের বর্ণাঢ্য সমাপ্তি হবে।


রাম দরবার ও আটটি মন্দিরের দৈবিক প্রাণ প্রতিষ্ঠা: একটি বিস্তারিত চিত্র

শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের জেনারেল সেক্রেটারি চম্পত রাই নিশ্চিত করেছেন যে, এই পবিত্র অনুষ্ঠান আজ সকাল ৬:৩০ মিনিটে শুরু হয়েছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার, ৫ জুন শেষ হবে। এই দিনটি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা দশেরা তিথি হিসেবেও পালিত হয়।

মূল আকর্ষণ হিসেবে, রাম মন্দিরের প্রথম তলায় স্থাপিত হবে শ্রী রাম দরবার, যেখানে রাজা রামের রাজকীয় রূপ, তাঁর সহধর্মিনী সীতা, অনুগত ভ্রাতা লক্ষ্মণ এবং চিরঞ্জীবী ভক্ত হনুমানের বিগ্রহ এক সঙ্গে স্থান পাবে। এটি ভক্তদের জন্য এক অভূতপূর্ব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে।

রাম মন্দির কমপ্লেক্সের বিস্তৃত পরিসরে নবনির্মিত আটটি ‘দেবলয়’ (ছোট মন্দির) স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শাস্ত্রীয় দেব-দেবীগণের বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। এগুলি হল:

  • উত্তর-পূর্ব কোণে (ঈশান কোণ): জ্ঞানের প্রতীক এবং ধ্বংসের দেবতা শিবলিঙ্গের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক।
  • দক্ষিণ-পূর্ব কোণে (অগ্নি কোণ): সকল বাধা দূরকারী এবং শুভ সূচনার দেবতা শ্রী গণেশের পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
  • দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রে: শক্তি ও ভক্তির প্রতীক বলশালী হনুমানজির বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে, যিনি রাম ভক্তদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
  • দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে (নৈঋত্য কোণ): তেজ ও প্রাণের উৎস সূর্য দেবের বিগ্রহ স্থাপিত হবে, যিনি জগৎকে আলো দান করেন।
  • উত্তর-পশ্চিম কোণে (বায়ব কোণ): শক্তি ও সমৃদ্ধির দেবী দেবী ভগবতীকে পূজা করা হবে, যিনি বিশ্বজননী রূপে পূজিত হন।
  • উত্তর বাহুর কেন্দ্রে: অন্ন ও প্রাচুর্যের দেবী মা অন্নপূর্ণার বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে, যা ভক্তদের অন্ন জোগানের প্রতীক।
  • মূল মন্দিরের প্রথম তলায়: আগেই উল্লিখিত শ্রী রাম দরবার এই স্থানেই তার পূর্ণ রূপ ধারণ করবে।
  • মন্দির কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে: ভগবান বিষ্ণুর নাগরাজ রূপ, শেষাবতারের বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে, যা সৃষ্টির স্থিতিশীলতা ও সংরক্ষণের প্রতীক।

    বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে


পূজা ও অনুষ্ঠানের বিশদ সময়সূচী এবং ভিআইপিদের অনুপস্থিতি

জ্যৈষ্ঠ শুক্ল অষ্টমী (৩ জুন, ২০২৫) থেকে দশমী (৫ জুন, ২০২৫) পর্যন্ত এই তিন দিনব্যাপী মহাযজ্ঞ চলবে। প্রতিদিনের পূজা সকাল ৬:৩০ মিনিটে শুরু হবে। প্রথম দুই দিন, অর্থাৎ ৩ ও ৪ জুন, সন্ধ্যা পর্যন্ত পূজা চলবে। চূড়ান্ত দিন, জ্যৈষ্ঠ শুক্ল দশমী (৫ জুন) তারিখে পূজা সকাল ৬:৩০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল ১১:২০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এরপর সকাল ১১:২৫ মিনিটে মূল প্রাণ প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হবে, যার পর বিশেষ পূজা, ভোগ নিবেদন এবং আরতি অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনের সমস্ত অনুষ্ঠান দুপুর ১:০০টার মধ্যে সম্পন্ন হবে।

গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় আবহে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র ধর্মীয় গুরু ও সাধু-সন্ন্যাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক বা ভিআইপি ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ করা হয়নি, সাধারণ জনগণও এই বিশেষ অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারবেন না, যা গতবারের ব্যাপক জনসমাগম থেকে ভিন্ন। তবে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ৫ জুন অযোধ্যার গুরুত্বপূর্ণ সরযূ জয়ন্তী জনোৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, যা অঞ্জনেয়া সেবা ট্রাস্ট দ্বারা আয়োজিত।

‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা


পবিত্র যাত্রা, অযোধ্যার রূপান্তর এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

প্রাণ প্রতিষ্ঠার পূর্বলক্ষণ হিসেবে, সোমবার সরযূ নদীর পবিত্র তীর থেকে এক শুভ কলস যাত্রা (কলশ যাত্রা) অনুষ্ঠিত হয়। এই যাত্রায় শত শত সাধু-সন্ত, আচার্য, শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের ট্রাস্টিগণ, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বিশাল সংখ্যক ভক্তবৃন্দ অংশ নেন, যা অযোধ্যার আধ্যাত্মিক পরিবেশে এক নতুন ঢেউ নিয়ে আসে। অযোধ্যা শহর বর্তমানে উৎসবের রঙে সেজে উঠেছে, এবং রাম মন্দির চত্বর বর্ণিল আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে।

মন্দির ট্রাস্ট জানিয়েছে, প্রথম তলার রাম দরবার সম্ভবত জনসাধারণের দর্শনের জন্য প্রতি ঘন্টায় ৫০ জন ভক্তকে পাস ইস্যু করে খোলা হবে, তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আলোচনাধীন।

অযোধ্যার সামগ্রিক উন্নয়নেও গতি এসেছে। অযোধ্যা কর্তৃপক্ষ রাম পথ এবং ধর্ম ১৪ কোষি মার্গ সহ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় রুটে মাংস বিক্রয় নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বিষয়ে দোকানদারদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘জনতা দরবার’-এ উত্থাপিত অভিযোগের ফল। অযোধ্যার মেয়র গিরিশ পতি ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, একইভাবে মদ্যপানের উপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনাও চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, খুব শীঘ্রই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে, যা অযোধ্যার পবিত্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

এই রাম দরবার প্রাণ প্রতিষ্ঠা মহোৎসব অযোধ্যার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। এটি কেবল রাম মন্দির কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের সমাপ্তিই নয়, এটি ভারত এবং বিশ্বজুড়ে রাম ভক্তদের জন্য এক আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর