ব্যুরো নিউজ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ : আসামে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মাস ছয়েক আগে রাজ্যের ভোটার তালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তনের চিত্র ফুটে উঠেছে। শনিবার ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) আসামের ‘বিশেষ সংশোধনী’ (Special Revision) পরবর্তী এক সমন্বিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন কারণে ভোটার তালিকা থেকে ১০.৫৬ লাখেরও বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভোটার সংখ্যার পরিসংখ্যান
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান খসড়া তালিকায় আসামে মোট ভোটারের সংখ্যা ২,৫১,০৯,৭৫৪ জন। তবে এই সংখ্যায় ৯৩,০২১ জন ‘ডি-ভোটার’ বা সন্দেহভাজন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কমিশনের বিশেষ অভিযানের পর মোট ১০,৫৬,২৯১ জন ভোটারের নাম তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
কেন বাদ পড়ল এত নাম?
নাম কর্তনের পেছনে মূলত তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে কমিশন:
মৃত্যু: ৪,৭৮,৯৯২ জন ভোটারের মৃত্যু হওয়ায় তাদের নাম সরানো হয়েছে।
ঠিকানা পরিবর্তন: ৫,২৩,৬৮০ জন ভোটার তাদের নিবন্ধিত এলাকা থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়ায় তাদের নাম বাদ পড়েছে।
একাধিক ভুক্তি (Duplicate): ৫৩,৬১৯টি নাম একই ব্যক্তির একাধিকবার বা জনতাত্ত্বিকভাবে সদৃশ এন্ট্রি হওয়ার কারণে সংশোধন বা ডিলিট করা হয়েছে।
ডি-ভোটার (D-Voter) প্রসঙ্গ
আসামের প্রেক্ষাপটে ‘ডি-ভোটার’ বা ডাউটফুল ভোটার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের অধীনে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই ভোটারদের ভাগ্য নির্ধারণ করে। যাদের কাছে সঠিক নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই, সরকার তাদের ভোটাধিকার স্থগিত করে দেয়। বর্তমানে রাজ্যে ৯৩,০২১ জন ডি-ভোটার রয়েছেন। যদিও তারা ভোটার কার্ড পান না, তবুও তাদের নাম, বয়স এবং ছবির মতো বিবরণগুলো খসড়া তালিকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
Mexico Interoceanic Train : মেক্সিকোতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা: ওক্সাকায় ইন্টার-ওশেনিক ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত ১৩
বিশেষ সংশোধনী ও যাচাই প্রক্রিয়া
গত ২২ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামের ৬১,০৩,১০৩টি পরিবারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই যাচাই প্রক্রিয়া চালানো হয়। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ৩৫ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ১২৬ জন নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা এবং প্রায় ২৯,৬৫৬ জন বুথ স্তরের কর্মকর্তা (BLO) নিয়োজিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোও এই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ৬১,৫৩৩ জন এজেন্ট নিয়োগ করেছিল।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন, আসামের জন্য নাগরিকত্বের বিশেষ সাংবিধানিক নিয়ম থাকায় এখানে এই বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষের পথে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
কমিশন জানিয়েছে, প্রকাশিত এই খসড়া তালিকার বিষয়ে কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। সমস্ত আপত্তি নিষ্পত্তির পর আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আসামের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকার ভিত্তিতেই আগামী বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



















