ব্যুরো নিউজ ৫ আগস্ট ২০২৫ : এক যুগান্তকারী প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে, উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরে একাধিক প্রাচীন হিন্দু মূর্তি এবং শিবলিঙ্গ উদ্ধার হয়েছে, যা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। অনন্তনাগ এবং বারামুল্লায় এই দুটি আবিষ্কারকে জম্মু ও কাশ্মীরের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রাচীন অতীত সংরক্ষণে স্থানীয় আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
১. অনন্তনাগে কারাকোটা রাজবংশের নিদর্শন
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারটি হয়েছে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার কারকোট নাগ-এ। সেখানে একটি প্রাকৃতিক ঝরনা সংস্কারের কাজ চলাকালীন শ্রমিকরা খননকার্য করার সময় প্রাচীন মূর্তির একটি ভাণ্ডার খুঁজে পান। পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD) একটি বৃহত্তর সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসাবে এই সংস্কার কাজ চালাচ্ছিল।
এই কারাকোটা রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ললিতাদিত্য মুক্তপীড়া । তিনি উত্তর ও মধ্য ভারত এবং মধ্য এশিয়ায় বিজয়ের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছিলেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৫টি সূক্ষ্ম কারুকার্যখচিত পাথরের নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১১টি শিবলিঙ্গ এবং একটি ভাঙা ভাস্কর্য রয়েছে, যা একটি মন্দিরের স্তম্ভের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই নিদর্শনগুলি ৬২৫–৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কркоটা রাজবংশের শাসনকালের বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এগুলি আরও প্রাচীন হতে পারে।
Ladakh : দেশের প্রথম হাইড্রোজেন-চালিত বাস পরিষেবা চালু হল লাদাখে !
২. মন্দির পুনর্গঠনের দাবি
একজন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার নয়, এটি আমাদের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কার।” এই স্থানটিতে কাশ্মীরি হিন্দুদের কাছে ইতিমধ্যেই ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে এবং এখানে একটি মন্দির পুনর্গঠনের দাবি উঠেছে।
আবিষ্কারের পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা আর্কাইভ, প্রত্নতত্ত্ব এবং জাদুঘর বিভাগের বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন যে মূর্তিগুলির ধরণ এবং সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে এখানে একসময় একটি বিশিষ্ট মন্দির কমপ্লেক্স ছিল। কিছু ভাস্কর্যে একাধিক দেব-দেবীর চিত্র রয়েছে, যা প্রাচীনকালে একটি প্রাণবন্ত ধর্মীয় কেন্দ্রের ইঙ্গিত দেয়। অনুমান করা হচ্ছে যে সংঘাতের সময় মূর্তিগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে কবর দেওয়া বা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
উদ্ধার করা নিদর্শনগুলি শ্রীনগরের শ্রী প্রতাপ সিং (এসপিএস) জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে সেগুলির সঠিক বয়স এবং উৎস নির্ধারণের জন্য বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হবে।
Kashmir : ৩০ বছর পর উলার লেকে ফুটল পদ্ম, কাশ্মীর উপত্যকায় ফিরল আশা ও সমৃদ্ধি
৩. বারামুল্লায় ( প্রাচীন বরাহমূল ) শত শত বছরের পুরোনো শিবলিঙ্গ
উত্তর কাশ্মীরে, একটি সমান্তরাল আবিষ্কারে, বারামুল্লার খানপোরায় একটি সেনা শিবিরের কাছে ঝিলাম নদী থেকে ১০ম শতাব্দীর একটি বিশাল শিবলিঙ্গ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকরা নিয়মিত বালি তোলার সময় এটি খুঁজে পান।
১৩৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থের সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা এই পাথরের শিবলিঙ্গটি প্রথমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২২ মিডিয়াম রেজিমেন্ট দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছিল। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে সেনাবাহিনী দ্রুত শিবলিঙ্গটি আর্কাইভ, প্রত্নতত্ত্ব এবং জাদুঘর বিভাগকে হস্তান্তর করে। এটি বর্তমানে এসপিএস জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে এটি সংরক্ষণ ও জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে।
জম্মু ও কাশ্মীর-এর আর্কাইভ, প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘরের পরিচালক কুলদীপ কৃষ্ণ সিধা বলেন, “এই উদ্ধার শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক সন্ধান নয়, বরং আমাদের স্থায়ী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রমাণও।” তিনি আরও বলেন, “বিভাগ জনসাধারণের শিক্ষাগত এবং আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির জন্য এ ধরনের নিদর্শনগুলির সংরক্ষণ এবং সম্মানজনক প্রদর্শনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই প্রাচীন নিদর্শনগুলি কাশ্মীরের আসল ইতিহাসের এক ঝলক দেয়, যেখানে তুর্কি আক্রমণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের পূর্বে বৈদিক ধর্ম প্রচলিত ছিল।