amit shah vs mamata banerjee

ব্যুরো নিউজ, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ : ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে চরমে পৌঁছাল সংঘাত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য সফরের শেষ দিনে তাঁকে ‘দুঃশাসন’ বলে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টায় বিজেপি নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীকেই বাংলার ‘দুঃশাসন’ ও ‘দুর্যোধন’ বলে অভিহিত করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সংঘাতের মূলে রয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) এবং সীমান্ত অনুপ্রবেশের বিতর্ক।

মমতার ‘মহাভারত’ খোঁচা ও শাহকে আক্রমণ

এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অমিত শাহকে নিশানা করে বলেন, “নির্বাচন এলেই বাংলায় দুঃশাসন আর দুর্যোধনরা চলে আসেন। ওঁর দু’চোখে বিপর্যয়ের বার্তা, চোখে কেবল হিংসা দেখা যায়। কুশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে উনি বাংলায় এসেছেন।” অনুপ্রবেশ ইস্যুতে শাহের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “কাশ্মীরে সন্ত্রাস থাকলে পহেলগাম কী করে হল? দিল্লিতে কেন সন্ত্রাসবাদী হামলা হল? উনি বলছেন মমতা জমি দিচ্ছেন না। রানীগঞ্জ, জামুরিয়া, বাঁকুড়া বা পেট্রাপোল-বনগাঁ সীমান্তে জমি কে দিয়েছে? আমরা সব উন্নয়ন করেছি, আর উনি কেবল মিথ্যা কথা বলছেন।”

Amit Shah BJP : নেতাজির স্মৃতি তর্পণে ভোটের দামামা; ২০২৬-এ বাংলায় পরিবর্তনের ডাক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।

ভোটার তালিকায় ৫৪ লক্ষ নাম ছাঁটাই ও এআই (AI) বিতর্ক

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধন বা ‘SIR’ প্রক্রিয়ার নামে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ আধিকারিকরা বাংলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, “এই দুঃশাসন বাবুর জন্য ৫৪ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করে ইআরও-দের (ERO) নাম করে এই জালিয়াতি চলছে। যদি একজনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যায়, তবে আমরা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করব।” এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানান যে, কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প তিনি হতে দেবেন না এবং নিজে নাগরিকত্বের ফর্ম পূরণ না করে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা দেন।

বিজেপির পাল্টা তোপ: ‘হিটলার-শাহি’র অভিযোগ

বৃহস্পতিবার বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে পাত্র বলেন, “আপনি অমিত শাহকে হুমকি দিচ্ছেন না, আপনি ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন।” এমনকি মুখ্যমন্ত্রী যে হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে ‘বেরোতে দেওয়া হয়েছে’ বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন পাত্র। তিনি দাবি করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাগ্যবান যে আমরা তাঁকে হোটেল থেকে বেরোতে দিয়েছি। আমরা চাইলে আপনি বাইরে পা রাখতে পারতেন না।” এই ঘটনাকে ‘হিটলার-শাহি’ এবং ‘একনায়কতন্ত্র’ (Tanasahi) বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ভোটার তালিকা সংশোধন ও ‘ঘেরাও’ বিতর্ক

সংঘাতের মূলে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) বা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া। অমিত শাহের দাবি, অনুপ্রবেশকারীরা ভোটার তালিকায় ঢুকে জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে, যা রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এর প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি ভোটার তালিকা থেকে প্রকৃত ভোটারদের (বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের) নাম বাদ দেওয়া হয়, তবে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিস ‘ঘেরাও’ করা হবে। বিহারের মন্ত্রী দিলীপ জয়সওয়াল এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা খারাপ করে ফেলেছেন।”

অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত কাঁটাতার নিয়ে সংঘাত

অমিত শাহ অভিযোগ তুলেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং সীমান্ত কাঁটাতারের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দিচ্ছেন না। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ‘দুঃশাসন’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “বাংলাকে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি বলা হচ্ছে, তাহলে পহেলগাম বা দিল্লিতে যে ঘটনা ঘটল, তার পিছনে কারা?” জমির প্রশ্নে মমতার দাবি, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাঁর সরকার প্রচুর জমি দিয়েছে, কিন্তু সীমান্তের ক্ষেত্রে তাঁর আপত্তির জায়গাটি কেন্দ্রের ‘মিথ্যাচার’ বলে তিনি দাবি করেন

WB ECI SIR : মগরাহাটে নিগৃহীত আইএএস সি মুরুগান : “কাউকেই ভয় পাই না, কাজ করেই ছাড়ব”, গাড়ি ভাঙচুরের পর পাল্টা হুঙ্কার পর্যবেক্ষকের।

২০২৬-এর লক্ষ্য: মহিলা ভোট ও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা

বিজেপির মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু সহ অন্যান্য নেতৃত্ব দাবি করেছেন, বাংলার মানুষ এই ‘অরাজকতা’ থেকে মুক্তি চান। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ২০২৬ সালে তাঁরা ১৯৬টির বেশি আসন (দুই-তৃতীয়াংশ) জিতে ক্ষমতায় আসবেন। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের কাছে টানতে তৃণমূল ও বিজেপি দুই পক্ষই এখন থেকেই মরিয়া। উল্লেখ্য, তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে টার্গেট করেই বিজেপির এই ‘দুঃশাসন’ ও ‘দুর্যোধন’ তকমা ব্যবহার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অমিত শাহ নিজে সরাসরি মমতার ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনো জবাব না দিলেও, তাঁর সফর শেষে বঙ্গ বিজেপির এই আক্রমণাত্মক মেজাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে যে আগামী নির্বাচন অত্যন্ত তিক্ত হতে চলেছে। অন্যদিকে বিহারের মন্ত্রী দিলীপ জয়সওয়াল থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপির নেতারা মমতার মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সব মিলিয়ে, ২০২৬-এর আগে বাংলার রাজনৈতিক ময়দান এখন এক হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ের সাক্ষী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর