AI 171 crash survivor pm modi

ব্যুরো নিউজ ১৩ জুন: আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার  বিমান দুর্ঘটনায় ২৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটলেও, অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন একজন যাত্রী – বিশ্বাস রমেশ। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

একমাত্র যাত্রীর ভয়ংকর অভিজ্ঞতা: “আমার চোখের সামনেই মানুষ মারা গেল”
এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাস রমেশ, ৪0 বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। বিশ্বাস রমেশ বলেছেন, “আমার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটে গেল। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি কীভাবে বেঁচে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম আমিও মারা যাব। আমার চোখের সামনেই কত মানুষ মারা গেল। পাইলট বিমানটি ওড়ানোর চেষ্টা করছিলেন… কিন্তু বিমানটি পড়ে গেল।” চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বাস রমেশ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বিমানটি ভেঙে যায় এবং তিনি নিজের সিট (১১এ) সহ ঝাঁপিয়ে পড়েন, যার ফলে তিনি আগুনে পুড়ে যাননি। তিনি লাফিয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কুমার আহত হলেও নিজের পায়ে হাঁটতে সক্ষম ছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় যে তিনি প্রাণঘাতী আঘাত পাননি।

বিমান বিন্যাস ও ১১এ সিটের গুরুত্ব
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের কনফিগারেশন অনুযায়ী, সিট ১১এ ইকোনমি ক্লাসের প্রথম সারিতে, বিজনেস ক্লাসের ঠিক পিছনে অবস্থিত। এটি বিমানের বাম দিকে একটি জানালার পাশের সিট, যা সামনের অংশের কাছাকাছি অবস্থিত। ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থানের কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বিশ্বাস রমেশের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি ছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ও সরকারের পদক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সকালে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে পৌঁছন। এরপর তিনি সকাল ৯টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী সিভিল হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নেন। তিনি বিশ্বাস রমেশের স্বাস্থ্যেরও খোঁজ নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিঞ্জারাপু এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি.আর. পাতিল।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময় বিমানটিতে ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি ছিল এবং বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে কাউকে বাঁচানোর কোনো সুযোগ ছিল না। সকল মৃতদেহ বের করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া করে মৃতদেহগুলি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

একাধিক দেশে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ: এই দেশগুলিতে ভ্রমণ করা কি নিরাপদ?

তদন্ত ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষা
বিমানটি লন্ডন যাচ্ছিল এবং আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার ৪০ সেকেন্ড পরেই মেঘনানি নগর এলাকার একটি আবাসিক ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আহমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক নিশ্চিত করেছেন যে, সিট ১১এ-তে বসা একজন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং স্থানীয় হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। গুজরাট সরকার জানিয়েছে, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়েছে এবং পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী কিঞ্জারাপু রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তের জন্য এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সরকার একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করছে, যা এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বিমান সুরক্ষাকে আরও জোরদার করার উপায় খুঁজে বের করবে। বিধ্বস্ত বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি উচ্চতা হারানোর কয়েক মুহূর্ত আগে একটি বিপদ সংকেত পাঠিয়েছিল। তদন্তকারীরা এখন ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার – যা ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত – বিশ্লেষণের উপর মনোযোগ দিচ্ছেন, যাতে ফ্লাইটের শেষ মুহূর্তগুলি পুনর্গঠন করা যায়। এই দুর্ঘটনাটি ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিপর্যয় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর