ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ৪ এপ্রিলঃ এ এক সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ফ্রড। সম্পূর্ণ নতুন এক কৌশল, যা থেকে অবশ্যই আপনাদের সাবধান হতে হবে। না হলে বেশ বিপদে পড়তে হতে পারে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের স্ক্যাম (Scam) আমারা শুনেছি। এবং অনেকেই ভুক্তভোগী।কোনো ওটিপি (OTP) নিয়ে বা কোন লিং (Link) ডাউনলোড করে দেখা গিয়েছে মুহূর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ড ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। এরকম অনেক খবরই প্রতিনিয়ত পাই আমরা, কিন্তু যারা এই ধরনের ফ্রড করে, তারা কিন্তু অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং নিত্যনতুন কৌশল বার করে।
এইরকম এক ধরনের নতুন কৌশল মাথা খাটিয়ে বার করে ফেলেছে সাইবার অপরাধীরা। আপনার ভয়েস ক্লোনিং অর্থাৎ গলার স্বর রেকর্ড করে, তারপর সেই গলার স্বর ব্যবহার করে লোক ঠোকানোর অভিনব পন্থা অবিস্কার করেছে এই অপরাধকারীরা। এর জন্য যে পদ্ধতি তারা ব্যবহার করেছে এখন, সেটিকে বলা হয় ভয়েস । এটি স্ক্যামার এবং প্রতারকদের সর্বশেষ এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অত্যাধুনিক সাইবার অস্ত্র।https://www.youtube.com/watch?v=OOhsmBpmKas
জেনে নেওয়া যাক ভয়েস ক্লোনিং আসলে কি?
ভয়েস ক্লোনিং (Voice Cloning) হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির ভয়েসের একটি কৃত্রিম সিমুলেশন। একজন ব্যক্তির ভয়েস ক্লোন করার জন্য শুধুমাত্র অল্প পরিমাণে তার কথা রেকর্ড করা প্রয়োজন। এইভাবে স্ক্যামাররা (Scammer) সহজেই আপনার ভয়েস চুরি করতে পারে এবং তাদের ইচ্ছামত এটি ব্যবহার করতে পারে।
প্রথমে বিভিন্নভাবে আপনার গলার স্বর রেকর্ড করার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য আপনাকে তারা নানা অজুহাতে ফোন করতে পারে। এবং বিভিন্ন অছিলায় ১ থেকে ২ মিনিট কথা বলানোর চেষ্টা করে। সেই চেষ্টা সফল হলে তারা আপনাকে গদ্গদ হয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। এখানে কোনও ওটিপি বা কোন লিংকের ব্যাপার নেই। কিন্তু তাদের লক্ষ্য সফল। তারা অইতুকু সময়ের মধ্যে আপনার ভয়েস রেকর্ড করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওইটুকুর মধ্যেই আপনার মোবাইলের কন্ট্রাক্ট লিস্ট (Contact list), এমনকি কল লিস্টও (Call list) ততক্ষণে তাদের হাতে। নিমেষে।
এরপর দ্বিতীয় ধাপ।এবার আপনার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে-এ ছানবিন চলবে। খুঁজে দেখা হবে আপনার গলার স্বর কোথাও আছে কি না। অনেকেই ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে নিজের বক্তব্য পোস্ট করেন।সেখান থেকেও আপনার ভয়েস রেকর্ড করে নেওয়া হয়
এবার আপনার ভয়েস ফেলা হয় AI-তে, অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এক বিশেষ সফটওয়্যার। ওই সফটওয়্যার এরপর আপনার গলার স্বর হুবহু নকল করবে- অতি নিখুঁত ও অতি ভয়ঙ্কর ভাবে।
কতটা ভয়ঙ্কর ? তা হলে শুনুন। আপনার মোবাইলের কল লিস্ট এবং কন্ট্রেক লিস্ট ধরে বোঝার চেষ্টা করা হয় কারা আপনার ঘনিষ্ঠ , কাদের সঙ্গে আপনি সবথেকে বেশিবার বা সবথেকে বেশীক্ষণ কথা বলেন মাঝে মধ্যেই। এরপর আপনার মোবাইলের নম্বর অর্থাৎ সিম ক্লোনিং করা হয়।এর মানে হল, আপনার মোবাইলের সিমের যা নম্বর, হুবহু সেই নম্বরে একটি ডুপ্লিকেট সিম তৈরি করে ফেলে সাইবার অপরাধীরা।এরপর সেই ক্লোন করা সিম থেকে ফোন করা হয় আপনার পরিচিতদের কাছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা হল, তাদের হাতে যে এআই ভয়েস ক্লোনিং প্রোগ্রাম (AI Voice Cloning Programme) আছে, তা সাংঘাতিক উন্নত। আপনার ভয়েস যদি ক্লোন করা হয়, আর এরপর ধরুন প্রতারকদের কেউ যদি সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফোন করে কারোর সঙ্গে কথা বলে, গলার স্বরটা কিন্তু আপনারই থাকবে। এতটাই ক্ষমতাধর সেই এআই প্রোগ্রাম (Cloning Programme)
এবার আপনার পরিচিতদের ফোন করে কাতর আবেদন, আমি খুব বিপদে পরেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার অনলাইনের কোনও মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে টাকা চাওয়া হয়। সরল বিশ্বাসে, কোনও সন্দেয় না করেই আপনার সেই বন্ধু বা আত্মীয় টাকা পাঠিয়ে দেন।
তাবে এই সাইবার ফ্রডরা অত্যন্ত চালাক। এই ভাবে তারা কিন্তু বেশি টাকা চায় না। কিন্তু কথা বার্তা বলার ফাঁকে তো আপনার বা আপনার উপকারী বন্ধুর মোবাইল থেকে অনেক তথ্যই তখন তাদের হাতে। তাই এর পরেই হয় আসল খেল। একটু পরেই ব্যাঙ্ক থেকে মেসেজ পাবেন, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অ্যামাউন্টের টাকা ট্রান্সফার সম্পন্ন হয়েছে।শুধু আপনারই নয়, আপনার সেই উপকারী বন্ধু বা আত্মীয়রও একই অবস্থা।
এই AI ভয়েস ক্লোনিং টেকনোলজিই (Voice Cloning Technology) সাইবার অপরাধীদের সবথেকে আধুনিক কৌশল। গত দুমাসের মধ্যে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এমনকি জাপান ও সিঙ্গাপুরেও এই ধরনের ফ্রডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মুশকিল হল লোক ঠকানোর এই নতুন পদ্ধতি রুখে দেওয়ার মতো কোনো উপায় এখনও খুঁজে বার করতে পারেননি সাইবার বিশেষজ্ঞরা। যদিও ভারতের কুখ্যাত সাইবার ফ্রড জামতারা গ্যাং এখনও এই পদ্ধতিতে কিছু করেনি। সম্ভবত এই বিশেষ সফটওয়্যার এখনও তাদের হস্তগত হয়নি। তবে গোয়েন্দারা মনে করেন যে জামতারা গ্যাং-এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধীদের যোগাযোগ আছে। কাজেই সাইবার এই অপরাধের এই নয়া কৌশল এদেশে পৌঁছোতেও খুব দেরি নেই। অতএব, সাধু সাবধান! (EVM News)