ব্যুরো নিউজ, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ : উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে এক সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ত্রিপুরার ছাত্র অ্যাঞ্জেল চাকমার (২৪) মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত ৯ই ডিসেম্বর সেলাকুই এলাকায় একটি মারপিটের ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর, ২৬শে ডিসেম্বর শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা SIT।
কী ঘটেছিল সেদিন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ৯ই ডিসেম্বর মণিপুরের বাসিন্দা সুরজ খওয়াসের জন্মদিনের পার্টি চলছিল। দেরাদুন এসএসপি অজয় সিং জানিয়েছেন, মদ্যপান ও হাসি-ঠাট্টার মধ্যে কোনো মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর যুবকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এই বিতর্ক ক্রমে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। অভিযোগ, হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র ও ভোঁতা বস্তু দিয়ে অ্যাঞ্জেল ও তাঁর ভাই মাইকেল চাকমার ওপর চড়াও হয়। মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত নিয়ে অ্যাঞ্জেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ২৬শে ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ ও পুলিশের দাবি
অ্যাঞ্জেলের পরিবারের অভিযোগ, বাজারে গ্রোসারি কিনতে যাওয়ার সময় একদল যুবক তাঁদের পথ আটকায় এবং ‘মোমো’, ‘চাইনিজ’, ‘চিঙ্কি’ বলে বর্ণবিদ্বেষমূলক গালিগালাজ করে। অ্যাঞ্জেল এর প্রতিবাদ করলে হামলা চালানো হয়। তবে দেরাদুন পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে বর্ণবিদ্বেষ বা জাতিগত হিংসার কোনো প্রমাণ মেলেনি। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, এটি একটি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। পুলিশের মতে, অভিযুক্তদের মধ্যেও মণিপুর এবং উত্তরাখণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের যুবক রয়েছে, তাই একে সরাসরি বর্ণবিদ্বেষ বলতে রাজি নয় প্রশাসন।
অধরা নেপালি অভিযুক্ত, ১ লক্ষ টাকার পুরস্কার
এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত যজ্ঞরাজ অবস্তি ওরফে যক্ষরাজ বর্তমানে পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরদিনই সে এলাকা ছেড়ে পালায়। উত্তরাখণ্ড পুলিশ সদর দপ্তর তাঁর সন্ধানদাতার জন্য ১ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এছাড়া নেপাল সীমান্তেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ধৃত পাঁচজনের মধ্যে দুজন নাবালক, যাদের আপাতত হোমে পাঠানো হয়েছে।
Bangladesh : সাম্প্রদায়িক কট্টরপন্থার কবলে বাংলাদেশ: দীপু দাসের পর এবার অমৃত মণ্ডলকে পিটিয়ে হত্যা
দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
অ্যাঞ্জেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লিতে ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (NSUI) মোমবাতি মিছিল করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলেছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকেও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।
এসপি (গ্রামীণ) পঙ্কজ গাইরোলার নেতৃত্বে গঠিত SIT বর্তমানে ডিজিটাল প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাচ্ছে। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে যে, তদন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে এবং কোনো অপরাধীকে রেহাই দেওয়া হবে না।


















