ব্যুরো নিউজ, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ : সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে ভোটার তালিকা সংশোধনের শুনানি প্রক্রিয়া তদারকি করতে গিয়ে চরম হেনস্থার মুখে পড়েন বিশেষ রোল পর্যবেক্ষক সি মুরুগান (আইএএস)। মগরাহাট ১ ও ২ নম্বর ব্লকে মাঠ পরিদর্শনে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে একদল উত্তেজিত জনতা, যাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন মহিলা। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা পর্যবেক্ষকের গাড়ি চাপড়াতে থাকেন এবং ধস্তাধস্তিতে গাড়ির দরজার হাতল ও লক ভেঙে যায়।
আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও মুরুগান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমি একজন আইএএস অফিসার, কমিশনের নির্দেশে কাজ করতে এসেছি এবং কাজ শেষ করেই ছাড়ব। নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব।” এই ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) মনোজ আগরওয়াল পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং জেলাশাসকের কাছে জরুরি রিপোর্ট তলব করেছেন।
চুঁচুড়া ও মেদিনীপুরে শুনানি স্থগিত
বিএলএ-২ বা বুথ স্তরের এজেন্টদের শুনানি কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল হুগলির চুঁচুড়া। তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার অভিযোগ করেন, এজেন্টদের উপস্থিতি ছাড়া স্বচ্ছভাবে শুনানি সম্ভব নয়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, হয় বিএলএ-দের ঢুকতে দিতে হবে, নাহলে লিখিতভাবে দিতে হবে কেন তারা ব্রাত্য। এই প্রতিবাদের জেরে ব্লক অফিসের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শুনানি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। একই ছবি দেখা যায় মেদিনীপুরেও। সেখানেও শুনানি কক্ষে বিএলএ-দের জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা ও বাদানুবাদের জেরে প্রায় ৪০ মিনিট কাজ থমকে ছিল।
অনড় নির্বাচন কমিশন
বিএলএ বিতর্ক নিয়ে সরব হলেও নিজের অবস্থানে অনড় নির্বাচন কমিশন। সিইও মনোজ আগরওয়াল জানান, “বিহার বা অন্য কোনও রাজ্যেই এসআইআর (SIR) শুনানির সময় রাজনৈতিক এজেন্টদের ঘরের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয় না। কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী কেবল ইআরও, বিএলও এবং সংশ্লিষ্ট ভোটারই ঘরে থাকতে পারেন।” তিনি আরও জানান যে, তৃণমূলের ভার্চুয়াল শুনানির দাবি মানার কোনও সংস্থান কমিশনের আইনে নেই।
তৃণমূলের পাল্টা হুঙ্কার ও আইএএস বনাম বিএলএ সংঘাত
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবারই বুথ এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে একজনও বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ না যায়। তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিকের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল সিইও-র সাথে দেখা করে হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি কমিশন বিএলএ-দের বাধা দেয়, তবে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় ৮ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কাই এই জনবিক্ষোভের মূল কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।



















