ECI unmapped voters hearing halted

ব্যুরো নিউজ, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হারে নাম বাদ পড়া রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দপ্তর। নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যারে যে সমস্ত ভোটারদের ‘আনম্যাপড’ (Unmapped) বা ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে সংযোগহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগত শুনানিতে ডাকার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, যদি কোনও ভোটারের নাম ২০০২ সালের মূল হার্ড কপিতে পাওয়া যায়, তবে সফটওয়্যার যাই বলুক না কেন, তাদের আর শুনানির জন্য হাজিরা দিতে হবে না।


কেন এই বিপত্তি? সফটওয়্যারের ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন

রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, এই বিভ্রাটের মূলে রয়েছে প্রযুক্তিগত ত্রুটি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সমস্ত পিডিএফ ফাইল সঠিকভাবে সিএসভি (CSV) বা টেক্সট ফরম্যাটে রূপান্তর করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে কমিশনের ‘বিএলও অ্যাপ’ অনেক বৈধ ভোটারের তথ্য খুঁজে পাচ্ছিল না। অথচ, জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছে থাকা নথিতে তাদের অস্তিত্ব বর্তমান। কেন্দ্রীয়ভাবে স্বয়ংক্রীয় পদ্ধতিতে এই নোটিশ তৈরি হওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল, যা রুখতে এবার হস্তক্ষেপ করল রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।

Assam SIR : আসামে বিধানসভা নির্বাচনের আগে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ: বাদ পড়ল ১০.৫৬ লাখ নাম


পরিসংখ্যান ও বর্তমান পরিস্থিতি

গত ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী, মৃত্যু বা ঠিকানা পরিবর্তনের কারণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। এর পাশাপাশি, সিস্টেমের মাধ্যমে আরও ৩১ লক্ষ ভোটারকে ‘আনম্যাপড’ হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এই বিশাল সংখ্যক ভোটারকে ভোটার তালিকায় টিকে থাকতে হলে সশরীরে হাজির হয়ে প্রমাণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় কারচুপি বা সন্দেহের অবকাশ থাকলে নোটিশ পাঠানোর এক্তিয়ার কেবলমাত্র স্থানীয় নির্বাচনী আধিকারিকের (ERO), কিন্তু এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে নোটিশ পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি আধিকারিকদের সংগঠনও।


নতুন নিয়ম: বাড়ি গিয়েই হবে যাচাই

অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের নির্দেশ অনুযায়ী:

  • যাদের নাম ২০০২ সালের হার্ড কপিতে আছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হবে না। যদি নোটিশ তৈরিও হয়ে থাকে, তবে তা যেন ভোটারদের না পাঠানো হয়।

  • বিএলও-রা (BLO) সরাসরি ভোটারদের বাড়িতে যাবেন এবং ভোটারের ছবি তুলে তা সিস্টেমে আপলোড করবেন।

  • শুধুমাত্র যদি হার্ড কপির তথ্যের সঙ্গে গরমিল পাওয়া যায় বা কোনও অভিযোগ জমা পড়ে, তবেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শুনানির জন্য ডাকা হবে।

Nitin Nabin BJP : বিজেপির নতুন কান্ডারি ৪৫ বছর বয়সি নীতিন নবীন: ২০ জানুয়ারি ঘোষণা হতে পারে নতুন সর্বভারতীয় সভাপতির নাম

রাজনৈতিক তরজা ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি

ভোটার তালিকা সংশোধনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই বাঁকুড়া জেলায় এক বিএলও-র রহস্যমৃত্যু কেন্দ্র করে বিতর্ক আরও দানা বেঁধেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে, ‘ভোটার নিধন’ প্রক্রিয়ার চাপে এবং আতঙ্কে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে। অন্যদিকে, গত কয়েকদিন ধরে কলকাতার সিইও অফিসের সামনে বিএলও-দের বিক্ষোভের জেরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে ‘ওয়াই প্লাস’ (Y-Plus) ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এই সিস্টেম-চালিত নোটিশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তবে রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে কয়েক লক্ষ ভোটার আপাতত সশরীরে হাজির হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর