ব্যুরো নিউজ, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২৫ : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। থাই সেনাবাহিনীর হাতে ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতসহ বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ও থাইল্যান্ডের সাফাই
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, থাই সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে একটি খননকারী যন্ত্র (Backhoe Loader) দিয়ে বিষ্ণু মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার পর থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও এলাকা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। থাইল্যান্ডের দাবি, বিতর্কিত ‘চং আন মা’ এলাকায় কম্বোডিয়ান সৈন্যরা সার্বভৌমত্ব জাহির করতে সাম্প্রতিক সময়ে এই মূর্তিটি স্থাপন করেছিল। থাই কর্তৃপক্ষের মতে, এটি কোনো স্বীকৃত ধর্মীয় স্থান নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক চাল।
কম্বোডিয়ার পাল্টা অভিযোগ
তবে থাইল্যান্ডের এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে কম্বোডিয়া। তাদের দাবি, মূর্তিটি ২০১৪ সালে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড ‘আন সেস’ এলাকায় নির্মিত হয়েছিল, যা সীমান্ত থেকে অন্তত ১০০ মিটার ভেতরে। কম্বোডিয়ার আধিকারিকদের মতে, এই স্থানটি হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র। বিশ্বের বৃহত্তম বিষ্ণু মন্দির ‘অংকর ভাট’-এর দেশ কম্বোডিয়া ঐতিহাসিকভাবেই তাদের ভূখণ্ড চিহ্নিত করতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ও মঠ ব্যবহার করে থাকে। ফলে এই মূর্তি ধ্বংসকে তারা তাদের সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে।
ভারতের তীব্র নিন্দা ও ‘সভ্যতার উত্তরাধিকার’
এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, “যেখানেই অবস্থিত হোক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মনে আঘাত দেয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবদেবীরা এই অঞ্চলের অভিন্ন সভ্যতার উত্তরাধিকার এবং এগুলি মানুষের গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের প্রতীক।” ভারত উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছে। তবে শুধু মাত্র ‘সুরক্ষা’ কেন্দ্রিক বিষয়ে , এই বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের সাথে অনেকে আফঘানিস্তানের বামিয়ানে তালিবান দ্বারা বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংসের তুলনা করছে, যেখানে বুদ্ধ মূর্তি আফঘানিস্তানের ইসলামিক সমাজ এবং পরিচয়ের পরিপন্থী হয়ে উঠছিল !
Thailand : শিব মন্দিরের অবস্থান ঘিরে শুরু হল সংঘর্ষ , ব্যবহার হল BM21 রকেট এবং F16 যুদ্ধ বিমান !
উত্তপ্ত সীমান্ত ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে নতুন করে সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চললেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিষ্ণু মূর্তিটি ধ্বংস করা কেবল ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত’ কোনো বিষয় নয়, বরং কম্বোডিয়াকে একটি কড়া ভূ-রাজনৈতিক বার্তা দেওয়াই ছিল থাইল্যান্ডের মূল উদ্দেশ্য।



















