ব্যুরো নিউজ, ০৯ই ডিসেম্বর ২০২৫ : নির্বাচন কমিশনের চলমান স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের রেলওয়ে কলোনিগুলিতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার প্রায় ৩৩,০০০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এক মাসেরও বেশি সময় আগে শুরু হওয়া এই এসআইআর প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা ৩০টি বুথের বুথ লেভেল অফিসাররা (BLOs) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ফর্ম জমা দেওয়ার আর মাত্র চার দিন বাকি, কিন্তু বারবার খোঁজ করেও এই ভোটারদের সন্ধান পাননি বিএলওরা। ফলে, এই নামগুলি খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালের নির্বাচন অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২,৭৬,০০০। রেল টাউনশিপটি আসানসোল শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে রয়েছে।
‘নিখোঁজ’ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ: অবসর, মৃত্যু ও উচ্ছেদ
এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের “উধাও” হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ অনুমান করা হচ্ছে:
অবসরের পর স্থান পরিবর্তন: প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো রেল পরিষেবা থেকে অবসর গ্রহণের পর মৃত্যু বা অন্য কোনো নির্বাচনী এলাকায় নতুন বাসস্থানে চলে যাওয়া।
কলোনির পরিবর্তন: এক সময় এই সরকারি রেল কোয়ার্টারগুলি পূর্ণ থাকলেও, আসানসোল বিভাগে রেল কর্মচারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বর্তমানে আবাসনগুলির দখলের হার কমেছে।
অবৈধ উচ্ছেদ: রাজনৈতিক দলগুলির সন্দেহ, ২০০৬ সালে অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার অজয় কুমার রাওয়ালের নেতৃত্বে যে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল, তার ফলেও বহু পুরোনো বাসিন্দা এলাকা ছেড়েছেন। সেই সময় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাসকারী হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছিল, যাঁদের অনেকের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল।
আসানসোল জংশন স্টেশন ১৮৮৭ সাল থেকে দেশের বৃহত্তম শিল্প সংযোগ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯২৫ সালে স্থাপিত আসানসোল রেল বিভাগ এখন ভারতের প্রাচীনতম বিভাগগুলির মধ্যে অন্যতম। এই টাউনশিপের কোয়ার্টার ও বাংলোগুলিতে রেল কর্মীরা ও তাঁদের পরিবার বসবাস করেন।
কয়েকটি বুথের চিত্র: ব্যাপক হারে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা
নির্দিষ্ট কয়েকটি বুথের তথ্য থেকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়:
| বুথ নম্বর | স্থান | মোট ভোটার সংখ্যা | ডিজিটাল করা ভোটারের সংখ্যা | নাম বাদ পড়ার সম্ভাব্য সংখ্যা |
| ১৩৯ | বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট (পূর্বতন ডুরান্ড ইনস্টিটিউট) সংলগ্ন | ৯৩১ | ২৪৩ | প্রায় ৬৮৮ |
| ১৪২ | ইস্টার্ন রেলওয়ে গার্লস স্কুল | ২১৯ | ১২৯ | প্রায় ৯০ |
| ২৬৫ | ইস্টার্ন রেলওয়ে গার্লস হাই স্কুল | ১,২৩০ | ৭০৭ | প্রায় ৫২৩ |
বিএলওরা নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে এই বন্ধ কোয়ার্টারগুলিতে তিনবারের বেশি পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা দরজার নিচ দিয়ে বা দরজার ল্যাচে গণনার ফর্ম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছে পূরণ করা ফর্ম জমা পড়েনি।
এই তিনটি বুথ থেকেই প্রায় ১,৩০০ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসানসোলের পুরোনো এবং নতুন রেল কলোনিগুলির অন্যান্য বুথগুলিতেও পরিস্থিতি একই রকম। বুথ নম্বর ১৩৯-এ তিন জন ভোটারের বাসস্থান সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আসানসোল পুরনিগমের স্থানীয় কাউন্সিলরও রেল কলোনিগুলিতে এত সংখ্যক ভোটারের অনুপস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

















