ব্যুরো নিউজ, ০৯ই ডিসেম্বর ২০২৫ : দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার (Nobel Peace Prize) অধরা রইলেও, অবশেষে ‘বিশ্বশান্তি’র স্বীকৃতি পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। তবে সেই সম্মান এলো বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা-র (FIFA) হাত ধরে। সদ্য চালু হওয়া ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’-এর প্রথম প্রাপক হিসেবে ওয়াশিংটনে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে গোল্ডেন ট্রফি এবং একটি চকচকে মেডেল গলায় ঝুলিয়ে নিলেন স্বঘোষিত ‘ডিলমেকার-ইন-চিফ’।
কিন্তু পুরস্কার ঘোষণার সময় যে ধরনের ‘অপূর্ব’ নীরবতা এবং পরে যে তীব্র উপহাসের ঢেউ উঠলো, তাতে প্রশ্ন উঠেছে— বিশ্বশান্তি না ২০২৬ বিশ্বকাপের ‘মসৃণ ডিল’ নিশ্চিত করাই এই পুরস্কারের আসল উদ্দেশ্য? অনেকে বলছেন, বিশেষ করে ট্রাম্পের জন্যই তড়িঘড়ি এই পুরস্কার সৃষ্টি করা হয়েছে।
অটোপেন বনাম নির্বাহী ক্ষমতা: বাইডেনের ‘ক্ষমা’ শেষ!
দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে কোনো নির্বাহী আদেশে সই করতে না পেরে ‘হাতে পাঁজর ওঠা’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেন বেশ অস্থির ছিলেন। আর তাই, তার প্রথম কাজ ছিল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (Joe Biden) সই করা সব নথি ‘টার্মিনেট’ করে দেওয়া। তাও আবার সোশাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর মাধ্যমে!
ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ‘অটোপেন’ (Autopen) নামের একটি স্বয়ংক্রিয় কলমের সাহায্যে বহু নথিতে সই করেছেন, যার ফলে সেগুলি ‘অবৈধ’ এবং ‘সম্পূর্ণভাবে বাতিল’। এর মধ্যে বাইডেনের দেওয়া ক্ষমা বা পার্ডনও রয়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞরা এই নজিরবিহীন প্রচেষ্টায় হতবাক হলেও, ট্রাম্পের বার্তা স্পষ্ট— ‘আগের ডনের সাম্রাজ্য শেষ, এখন আমার আইন চলবে।’
Indigo Airlines service disaster : ইন্ডিগো বিপর্যয়ে টিকিটের দাম বাঁধল কেন্দ্র, ইকোনমি ক্লাসের টিকিটের ঊর্ধ্বসীমা চালু করল এয়ার ইন্ডিয়া।
ক্যাবিনেটে ঘুম এবং ‘আবর্জনা’ তত্ত্ব
এই ‘টার্মিনেশন’ পর্ব শেষ হতেই রাতে ট্রাম্পের শুরু হয় প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ‘পোস্টিং ও রিপোস্টিং’ ম্যারাথন, যেখানে তিনি প্রতি দু’মিনিটে গড়ে একটি করে পোস্ট করেছেন। এত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ পরের দিন সকালে মন্ত্রীসভার দীর্ঘ বৈঠকে ট্রাম্পকে একাধিকবার ঝিমিয়ে পড়তে দেখা যায়— যা সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশ্যে ধরা পড়ল।
যদিও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং পুরো তিন ঘণ্টার বৈঠক পরিচালনা করার প্রমাণ’ হিসেবে দেখিয়েছেন। আর সেই মনোযোগের ফলস্বরূপ প্রেসিডেন্ট সোমালি অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বলে চিহ্নিত করেন এবং অর্থনীতি নিয়ে কিছু ‘অবিশ্বাস্য’ দাবি করেন, যেমন— ড্রাগের দাম ২০০% থেকে ৮০০% পর্যন্ত কমানোর ‘অভূতপূর্ব ডিল’।
হোন্ডুরাসের কার্টেল বসকে মুক্তি: শান্তিকামী পদক্ষেপ?
শান্তিরক্ষার এই মহাযজ্ঞের মধ্যেই ট্রাম্পের সবচেয়ে চমকপ্রদ সিদ্ধান্তটি আসে। মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ক্যারিবিয়ান সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও, হোন্ডুরাসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দেন ট্রাম্প। হার্নান্দেজ ৪৫০ টন কোকেন পাচারের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৪৫ বছরের জেল খাটছিলেন।
এরপরই তিনি বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ এনে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য হেনরি কুয়েলারকেও ক্ষমা করে দেন। অর্থাৎ, এক হাতে তিনি আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের নৌকায় ক্ষেপণাস্ত্র মারার নির্দেশ দিচ্ছেন, অন্য হাতে মাদক কার্টেলের সঙ্গে যুক্ত প্রেসিডেন্টকে মুক্তি দিচ্ছেন।
অবশেষে শান্তি পুরস্কার! ফিফা সভাপতির ‘মহৎ উদ্দেশ্য’
নোবেল না পেলেও, ট্রাম্পের এই ‘শান্তিপ্রয়াস’ সম্ভবত ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর (Gianni Infantino) চোখ এড়ায়নি। ২০২৬ বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের জন্য ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা চাওয়া ইনফান্তিনো ওয়াশিংটনের ড্র অনুষ্ঠানে মঞ্চে এসে ট্রাম্পকে ভূষিত করেন।
ইনফান্তিনো বলেন, “এটা আপনার পুরস্কার, আপনার শান্তি পুরস্কার। আপনি যেখানে খুশি এই সুন্দর মেডেল পরে যেতে পারেন।”
পুরস্কার গ্রহণ করে ট্রাম্প যথারীতি দাবি করেন, এটি তাঁর জীবনের অন্যতম ‘মহান সম্মান’। তিনি আরও দাবি করেন যে, তিনি কঙ্গো-তে ‘কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন’ এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগেই’ বহু সংঘাত মিটিয়ে দিয়েছেন। তবে নয়াদিল্লি বহুবারই এই দাবিতে মার্কিন ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে।
পুরস্কার ও ট্রাম্পের দাবি শোনার পর ইন্টারনেট উপহাস আর ‘মিম’-এ ভরে গেছে। একজন ‘এক্স’ ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই ভুয়ো শান্তি পুরস্কারের জন্য আমি অনেক টাকা দিয়েছি।”
ভুয়ো হোক বা না হোক, ডিল-মাস্টারের জন্য এই পুরস্কার এক বিরাট সাফল্য, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই!

















