5 lakhs gitapath brigade kolkata

ব্যুরো নিউজ, ০৮ই ডিসেম্বর ২০২৫ : কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে রবিবার এক ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বাংলা। সনাতন সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত ‘পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ অনুষ্ঠানে প্রায় ৬.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ অংশ নিলেন বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। বিপুল সংখ্যক সাধু-সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং পরিবার-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকে আসা অগুনতি মানুষ সকাল থেকেই ময়দান ভরিয়ে তোলে।

সচরাচর রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য পরিচিত এই ব্রিগেড ময়দান এদিন যেন গেরুয়া সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। ভক্তরা একযোগে পবিত্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হাতে নিয়ে শ্লোক পাঠ করেন, যার সুর বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। উদ্যোক্তারা জানান, পরিকল্পিত পাঁচ লক্ষ কণ্ঠের লক্ষ্যের চেয়েও বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল। অভূতপূর্ব এই ভিড় সামলাতে তিনটি বিশাল মঞ্চ, ব্যাপক ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

রাজ্যপাল ও সাধু-সন্ন্যাসীদের বার্তা

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ড. সি. ভি. আনন্দ বোস। তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আধ্যাত্মিক, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। গীতাকে “ঈশ্বরের গীতি” হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই পবিত্র গ্রন্থ নিঃস্বার্থ কর্ম ও উদ্দেশ্য-চালিত জীবনের পথ দেখায় এবং সমাজ ও দেশের প্রতি নাগরিকদের কর্তব্য পালনে অনুপ্রেরণা যোগায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত ধর্মগুরু ও সন্ন্যাসীরা, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ (কার্তিক মহারাজ), বাগেশ্বর ধামের ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী, গীতা মনীষী মহামণ্ডলের স্বামী জ্ঞানানন্দজী মহারাজ এবং সাধ্বী ঋতম্ভরা। এঁরাই সম্মিলিত গীতা পাঠের মূল নেতৃত্ব দেন। কার্তিক মহারাজ মন্তব্য করেন যে, সমাজে যখন বিভেদের পরিবেশ, তখন এই ধরনের সমবেত পাঠ সঠিক দিশা ও মানসিক ভিত্তি প্রদান করে।

Ram Mandir Dhwaja : ঐতিহাসিক মুহূর্ত: রামরাজ্যের ধর্ম ধ্বজ উত্তোলন

মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক বিতর্ক

এই অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল সুদূরপ্রসারী, কারণ এটি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় তৃণমূলের বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের দ্বারা ‘বাবরি মসজিদ-শৈলীর’ কাঠামো তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের একদিন পরেই অনুষ্ঠিত হলো। এই সমাবেশকে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এবং তাদের শরিকদের রাজনৈতিক পেশি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, রাজ্য সভাপতি সামিক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, এবং প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ দলের সমস্ত শীর্ষ নেতা এই ধর্মীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন।

  • সাধ্বী ঋতম্ভরা সরাসরি মুর্শিদাবাদের ঘটনার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেন: “এই দেশে বাবর বা বাবরি’র কোনো ভিত্তি নেই। কেউ ইট দিয়ে কাঠামো তৈরি করতে পারে, কিন্তু হৃদয়ে বাবরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না… এই দেশ রামের। এখানে শুধু গেরুয়াই বিরাজ করবে। এটাই সনাতন সত্য।”

  • সামিক ভট্টাচার্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ‘বাবর-পন্থী’ হওয়ার অভিযোগ এনে বলেন, “গীতা পাঠের অনুষ্ঠানের জন্য যদি মানুষকে সমালোচিত হতে হয়, তবে এটিই প্রমাণ করে যে আমরা কোন দিকে এগোচ্ছি।”

  • কার্তিক মহারাজ যদিও এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

  • বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এই সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক দৃশ্য’ এবং ‘বিশুদ্ধ ভক্তির’ প্রকাশ বলে অভিহিত করেন।

এর জবাবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এই আয়োজনকে গীতার ‘অপব্যবহার’ এবং ভোটের আগে হিন্দুদের মেরুকরণের কৌশল বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে, বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির পাল্টা ঘোষণা করেছেন যে তিনি মুর্শিদাবাদে এক লক্ষ মানুষের কোরান পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন।

Putin India visit : বন্ধুত্বের বার্তা: পুতিনকে রুশ ভাষায় ভগবৎ গীতা উপহার দিলেন মোদি, আজ মূল শীর্ষ বৈঠক

সনাতন সংস্কৃতি সংসদের সম্পাদক স্বামী নিরগুনানন্দ জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তিনি উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলার গভীর আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং সামাজিক সম্প্রীতি প্রচার করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর