ব্যুরো নিউজ, ০৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ : প্রায় আট দশক ধরে চলে আসা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ নতুন দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং আলিঙ্গন করেন। এই সফরের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনকে রুশ ভাষায় লেখা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার একটি অনুলিপি উপহার দেন।
গীতা উপহার ও মোদির বার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদি সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে জানান, “প্রেসিডেন্ট পুতিনকে রুশ ভাষায় গীতার একটি কপি উপহার দিলাম। গীতার শিক্ষা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়।” এই উপহার দুই নেতার ব্যক্তিগত সখ্য এবং ভারত-রাশিয়ার সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও গভীর করেছে।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনার পর দুই নেতাই একই গাড়িতে চড়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ৭, লোক কল্যাণ মার্গে যান, যেখানে মোদি তাঁর বন্ধুর জন্য একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করেন। গত বছর মস্কো সফরে পুতিনের দেওয়া আতিথেয়তার প্রত্যুত্তর হিসেবেই এই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
শুক্রবারের ব্যস্ত কূটনৈতিক সূচি
ইউক্রেন সংঘাতের আবহে পুতিনের এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শুক্রবার, অর্থাৎ সফরের দ্বিতীয় দিন তাঁর জন্য ঠাসা কূটনৈতিক সূচি রয়েছে:
সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা (গার্ড অফ অনার) জানানো হবে।
এরপর তিনি রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
মূল ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে হায়দ্রাবাদ হাউসে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি সেখানে পুতিন ও তাঁর প্রতিনিধি দলের জন্য একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন।
শীর্ষ সম্মেলনের পরে পুতিন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকের নতুন ইন্ডিয়া চ্যানেল উদ্বোধন করবেন।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় ভোজসভার আয়োজন করবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ ভারত ত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য, তেল ও ইউক্রেন সংঘাতের এজেন্ডা
শীর্ষ বৈঠকে মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে:
১. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাঠামোর অধীনে ভারতীয় শ্রমিকদের রাশিয়ায় চলাচলের সুবিধা এবং লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট নিয়ে চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
২. বাণিজ্য ঘাটতি: ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি এবং আমেরিকার শুল্ক আরোপের পটভূমিতে রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল (crude oil) কেনার ফলে ভারতের যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কমানোর উপর জোর দেবে নতুন দিল্লি। ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি, খাদ্যপণ্য ও ভোক্তা সামগ্রীর ক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানি বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হবে।
৩. ইউক্রেন সংঘাত: পুতিন ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে আমেরিকার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অবহিত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত বরাবরই বলে এসেছে যে, আলোচনা ও কূটনীতিই এই যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পথ।
আমেরিকা কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার তেল কেনার উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর মতো চরম পরিস্থিতির মাঝে পুতিনের এই সফর ভারত ও রাশিয়ার পুরনো কৌশলগত সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।



















