ব্যুরো নিউজ ১১ নভেম্বর ২০২৫ : সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লা (Lal Qila) মেট্রো স্টেশনের গেট নং ১-এর কাছে একটি চলন্ত হুন্দাই আই২০ (Hyundai i20) গাড়িতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং ২৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
দিল্লি পুলিশের কমিশনার সতীশ গোলচা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট নাগাদ একটি ধীরগতিতে চলা গাড়িতে এই বিস্ফোরণটি হয়, যার ফলে আশেপাশের আরও তিনটি গাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ (LNJP) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, সেখানে ১৫ জনকে আনা হয়েছিল, যার মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই।
বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতায় গাড়ির অংশবিশেষ চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা কাছে এসে দেখি রাস্তার ওপর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে রয়েছে। এমন তীব্র শব্দ জীবনে শুনিনি।”
তদন্তকারী সংস্থা ও সন্দেহের অভিমুখ
বিস্ফোরণের খবর পেয়েই দিল্লি পুলিশ, দমকল বাহিনীর পাশাপাশি ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA), ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG) এবং ফরেনসিক দল (FSL) ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। দ্রুত এলাকাটি সিল করে দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনার নিয়মিত তদারকি করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে।” তিনি আহতদের দেখতে LNJP হাসপাতালেও যান।
শুরুর থেকেই এটিকে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলা (Terror Strike) বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, এটি ফিদায়ে’ন (Fidayeen) ধাঁচের হামলা হতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। দিল্লি, মুম্বাই সহ অন্যান্য বড় শহরগুলিতে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং মেট্রো রেলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
গাড়ি ও সন্দেহভাজনদের পরিচয়
বিস্ফোরণে ব্যবহৃত আই২০ গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর (HR 26 7624) হরিয়ানার। গাড়ির মালিকানা হাতবদল হওয়ার একটি লম্বা শৃঙ্খল পুলিশ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক মালিক সলমান ও পরবর্তী ক্রেতা দেবেন্দরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
তদন্তে জম্মু ও কাশ্মীরের দুই ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে— তারিক এবং ডঃ উমর মোহাম্মদ। সূত্র মারফত খবর, পুলওয়ামা থেকে তারিককে আটক করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির দৃঢ় সন্দেহ, আই২০ গাড়িটির ভিতরে মৃত ব্যক্তিটি হলেন ডঃ উমর মোহাম্মদ। সিসিটিভি ফুটেজে গাড়ির চালকের আসনে মাস্ক পরা অবস্থায় যাকে দেখা যায়, তাকেও উমর মোহাম্মদ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
ফরিদা’বাদ মডিউলের যোগসূত্র
পুলিশের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই হামলার সঙ্গে ফরিদা’বাদ-ভিত্তিক একটি সন্ত্রাসবাদী মডিউলের যোগসূত্র থাকতে পারে। এর আগে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এই মডিউলের আট সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে এবং দিল্লি-এনসিআর-এ বড়সড় হামলার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার দাবি করে। সেই অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক— যার মধ্যে প্রায় ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল— বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, উমর মোহাম্মদ দুপুর ৩টা ১৯ মিনিট নাগাদ গাড়িটি লালকেল্লার পার্কিং লটে রেখে দেন এবং প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি গাড়ির ভেতরেই বসে ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, তিনি কারো নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। এই আই২০ গাড়িটি হরিয়ানা থেকে বদর্পূর রুট ধরে দিল্লিতে প্রবেশ করেছিল। গাড়ির ভেতরে বিস্ফোরণ হলেও কোনো বিস্ফোরকের খোল বা স্লিভার্স (pellet) খুঁজে না পাওয়া এবং কোনো বিস্ফোরক গর্ত (crater) তৈরি না হওয়ায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি জটিল হচ্ছে।
বর্তমানে পুলিশ সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে এবং এই হামলার নেপথ্যে থাকা সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।



















