ব্যুরো নিউজ ০৬ নভেম্বর ২০২৫ : ভারত ও ইসরায়েল মঙ্গলবার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি বা মউ (MoU) স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো, উভয় দেশের মধ্যেকার বর্তমান শক্তিশালী সম্পর্ককে একটি সুসংহত পথনির্দেশ দেওয়া এবং আরও জোরদার করা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তেল আভিভে অনুষ্ঠিত যৌথ কার্যনির্বাহী গোষ্ঠীর (JWG) ১৭তম বৈঠকে এই চুক্তিটি সই হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আমীর বারাম বৈঠকে সহ-সভাপতিত্ব করেন।
চুক্তির মূল বিষয়গুলি
এই চুক্তি অনুসারে, উভয় দেশই কৌশলগত সংলাপ, প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, এই মউ উন্নত প্রযুক্তির আদান-প্রদান এবং যৌথভাবে গবেষণা ও উৎপাদনের (Co-development and Co-production) পথ খুলবে। উভয় পক্ষই মনে করে, এই সহযোগিতায় একে অপরের শক্তি থেকে দুই দেশই লাভবান হবে। তারা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা করেছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত-বন্দনা
চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’আর ভারতে এক সাক্ষাৎকারে ভারতকে “এক বিশ্বশক্তি (Global Superpower)” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দুটি গণতন্ত্রের সম্পর্ক এখন “আগের চেয়েও শক্তিশালী”।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা ক্রমাগত সম্পর্ককে উন্নত করে চলেছি। ভারতের বন্ধুত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।” তিনি জানান, প্রতিরক্ষা, কৃষি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশই এগিয়ে চলেছে।
সন্ত্রাসবাদ দমনে এক জোট
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে সা’আর বলেন, ভারত ও ইসরায়েল একই ধরনের অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি লস্কর-ই-তৈবার মতো সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ইসরায়েলের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা আর কোনো দেশের নেই, এবং আমরা সেই অভিজ্ঞতা ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।”
ভারত ভবিষ্যৎ, ইজরায়েল আঞ্চলিক শক্তি
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাস্তবিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্য দুই দেশই আগ্রহী। ভারত হলো ভবিষ্যৎ। ইসরায়েল ছোট হলেও আমরা একটি আঞ্চলিক শক্তি। একসঙ্গে আমরা বিরাট কিছু করতে পারি, এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা করব।” তিনি আরও জানান, আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েল উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান
কয়েক দিন আগেই পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই ঘটনা অনেক ভারতবাসীর মনে এই চিন্তা এনেছিল যে, এমন পরিস্থিতিতে ভারত ঠিক কী ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা বা জোট তৈরি করবে। এখন ভারতের কূটনৈতিক শক্তি সুস্পষ্ট হয়েছে। প্রতিরক্ষায় রাশিয়ার সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পাশাপাশি, ভারত এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দশ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সর্বশেষে ইসরায়েলের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে ‘পাকিস্তানের উপর আক্রমণ, সৌদি আরবের উপর আক্রমণ’ জাতীয় একটি অকার্যকর ধারা থাকলেও (যা সম্প্রতিকালে আফঘানিস্তানের সাথে সংঘাতে প্রমাণিত হয়েছে) , ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি সামরিক প্রযুক্তির হস্তান্তর, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, ক্রস প্ল্যাটফর্ম অপারেশন, সরঞ্জাম ক্রয়, এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রের যৌথ উন্নয়ন ও উৎপাদনের উপর জোর দেয়। ভারতের কাছে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি এবং অতুলনীয় দক্ষ জনশক্তি আছে, তাই নিজেদের যুদ্ধ লড়তে ভারতের কোনো ‘বিদেশি সৈন্যে’র প্রয়োজন হয় না।
সুতরাং, পৃথিবীর বর্তমান সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক পরাশক্তি—রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—এবং নিজেদের চেয়ে অনেক বড় সংঘাত থেকে প্রায়শই বিজয়ী হয়ে আসা ইসরায়েলের মতো উন্নত সামরিক শক্তির সাথে সমানে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে ভারত আজ এক অত্যন্ত শক্তিশালী সামরিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।



















