ব্যুরো নিউজ ০৫ নভেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দলবদল, ব্যক্তিগত জীবন আর ক্ষমতা—এই ত্রয়ী মিলেমিশে একাকার। সেই ধারাই বজায় রেখে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গী করেই তিনি ফিরলেন তাঁর ‘ঘরে’—তৃণমূল কংগ্রেসে।
সোমবার দুপুরে নির্ধারিত সময়েই তৃণমূল ভবনে পৌঁছান এই ‘গোল্ডেন ডুও’। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় ঘাসফুলের পতাকা ও উত্তরীয়।
শোভনের প্রত্যাবর্তন: “এটাই আমার সংসার”
আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগদানের পর শোভন চট্টোপাধ্যায় আবেগে আপ্লুত। তাঁর কথায়, “আমার ধমনী, শিরা সবটাই তৃণমূলের। এটাই আমার ঘর, এটাই আমার সংসার। আমার কাজ দলকে আরও শক্তিশালী করা।”
দলীয় সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যকলাপে যোগ দেওয়ার আর্জি নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদনেই এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে।
কালীঘাট ও পদ-জট
অরূপ বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, শোভন-বৈশাখী দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল ভবন থেকে তাঁরা সরাসরি কালীঘাটে অভিষেকের বাড়িতে রওনা দেন।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নতুন পদ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরই তাঁকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর নিউটাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ বা NKDA-এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, এবার তাঁর দলের পদ পাওয়ার সেই ‘জট’ সোমবারই কাটতে চলেছে।
দলবদলের ‘টুরিস্ট’ শোভন
২০১৮ সালে কলকাতার মেয়র পদ এবং রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর ২০২১ সালে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে তিনি মোটেই সক্রিয় ছিলেন না এবং এরপর বিজেপিও ছেড়ে দেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্যামাক স্ট্রিটে বৈঠকের পরই তাঁর তৃণমূলে ফেরার পথ প্রশস্ত হয়েছিল। অক্টোবরে দার্জিলিং-এ বৈঠকের পর এবার ঘটল তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তন।
বঙ্গ রাজনীতিতে ‘বিনোদন’
শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রত্যাবর্তন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের মধ্যে খুবই প্রচলিত একটি ধারার প্রতিফলন। এখানে রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ‘মধুর সংমিশ্রণ’ প্রায়শই দেখা যায়। রাজ্যের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন , রাজনীতি থেকে দুর্নীতিতে , এভাবে বারবার জনসমক্ষে চলে এসেছে। জনসাধারণের জন্য এগুলি বিনোদন এবং কৌতুকের বিষয়বস্তু হয়ে উঠলেও, রাজনৈতিক স্থিতি এবং সিরিয়াসনেস নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!



















