ব্যুরো নিউজ ০৫ নভেম্বর ২০২৫ : হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এ ‘ভোট চুরির’ চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে বুধবার সরব হলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সাংবাদিক বৈঠকে ‘H ফাইলস’ নামে নথি প্রকাশ করে তিনি দাবি করেন, হরিয়ানায় কংগ্রেসের নিশ্চিত জয়কে বিজেপির জয়ে রূপান্তরিত করার জন্য একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৫ লাখ ভোট চুরি করা হয়েছে। তিনি এই ঘটনাকে তাঁর নতুন ‘H-বোমা’ (হরিয়ানা বোমা) হিসেবে অভিহিত করেন।
২৫ লাখ ভুয়ো ভোটারের দাবি
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ অনুসারে, হরিয়ানার ভোটার তালিকায় মোট ২৫,৪১,১৪৪টি এন্ট্রি ‘ভুয়ো’ বা জাল। এর মধ্যে রয়েছে:
- ৫.২১ লাখ ডুপ্লিকেট ভোটার।
- ৯৩,১৭৪ অবৈধ ভোটার।
- ১৯.২৬ লাখ বাল্ক ভোটার (Bulk Voters)।
- এছাড়াও, ১.২৪ লাখ ভোটার আছে, যাদের ছবি জাল।
রাহুল গান্ধীর দাবি, হরিয়ানার ভোটার তালিকায় প্রতি আটজনের মধ্যে একজন ভুয়ো। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে ডুপ্লিকেট ভোটার সরানোর সফটওয়্যার থাকা সত্ত্বেও কেন তা ব্যবহার করা হচ্ছে না?
চাঞ্চল্যকর ‘ব্রাজিলিয়ান মডেল’ দাবি
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দাবিটি ছিল এক ‘ব্রাজিলিয়ান মডেল’কে নিয়ে। রাহুল গান্ধী বলেন, ওই মডেলের একটি স্টক ছবি ব্যবহার করে হরিয়ানার ভোটার তালিকায় ‘সীমা’, ‘সুইটি’ ইত্যাদি নামে একাধিক এন্ট্রি করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধী আরও দাবি করেন যে, সব এক্সিট পোল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের ইঙ্গিত দিলেও ফলাফল উল্টে যায় এবং হরিয়ানার নির্বাচনী ইতিহাসে এই প্রথমবার পোস্টাল ভোটের ফলাফল মূল ভোটের ফলাফলের থেকে ভিন্ন হয়। পোস্টাল ব্যালটে কংগ্রেস ৭৩টি এবং বিজেপি মাত্র ১৭টি আসন পেয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
নির্বাচন কমিশন এবং মোদীর বিরুদ্ধে গাঁটছড়ার অভিযোগ
রাহুল গান্ধী বলেন, তিনি ১০০% প্রমাণ নিয়েই ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করছেন। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেসের ভূমিধস জয়কে পরাজয়ে পরিণত করার জন্য একটি পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়েছিল।
তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) সহ দুই নির্বাচন কমিশনার বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। তাঁর কথায়, “তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আছেন” এবং দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘ধ্বংস’ করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের পাল্টা জবাব: ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন’
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর এই গুরুতর অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে নির্বাচন কমিশন (EC)। ইসি সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর দাবিগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
- আপিল এবং পিটিশন: কমিশন জানিয়েছে, হরিয়ানা বিধানসভার ৯০টি আসনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মাত্র ২২টি নির্বাচন সংক্রান্ত পিটিশন বিচারাধীন রয়েছে। নির্বাচনী তালিকার বিরুদ্ধে আপিলের সংখ্যাও শূন্য।
- বুথ এজেন্টদের ভূমিকা: কমিশন প্রশ্ন তুলেছে, “কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টরা বুথগুলিতে কী করছিলেন? কোনো ভোটারের পরিচয় সন্দেহজনক মনে হলে বা তিনি ভোট দিয়ে থাকলে আপত্তি জানানোর কথা ছিল তাঁদের।”
- SIR এবং BLAs: ইসি সূত্র থেকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়েছে, “রাহুল গান্ধী কি SIR (যা ডুপ্লিকেট, মৃত এবং স্থানান্তরিত ভোটারদের সরিয়ে দেয়) সমর্থন করছেন, নাকি এর বিরোধিতা করছেন?” কংগ্রেসের বুথ লেভেল এজেন্টরা (BLAs) কেন তালিকা সংশোধনের সময় একাধিক নামের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি বা আপিল দায়ের করেননি, সেই প্রশ্নও তুলেছে কমিশন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ হরিয়ানা বিধানসভা ভোটে বিজেপি ৪৮টি আসন জেতে, যেখানে কংগ্রেস পায় ৩৭টি। দুই দলের ভোটের ব্যবধান ছিল সামান্য—মাত্র ০.৬০%। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের ‘H-বোমা’ কতটা গ্রহণ যোগ্য সেই নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে । যদিও জন সাধারণ এবং সংবাদ মাধ্যমে হরিয়ানায় কংগ্রেসের হার, দুই দলীয় অধিকারিক শেলজা এবং ভুপিন্দের হুদ্দার মধ্যে মতানৈক্যের কারণে প্রচারিত তবুও SIR দেখে ভোট চুরির কথা মনে পড়লে , রাজনীতিতে শুধুমাত্র প্রাসাঙ্গিক হয়ে থাকার ইঙ্গিত করে !



















