bjp vs tmc malviya abhishek banerjee

ব্যুরো নিউজ ৩ নভেম্বর ২০২৫ : রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ নিবিড় প্রক্রিয়া (SIR) শুরুর আগেই তা ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষ করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং ভোটব্যাঙ্কের বিষয়টি সামনে আসতেই শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে চাপানউতোর তুঙ্গে।

 

SIR ঘোষণার পর গৃহসহায়িকাদের ‘উধাও’ হওয়ার দাবি: অমিত মালব্যর কটাক্ষ

রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ নিবিড় প্রক্রিয়া (SIR) ঘোষণার পর উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকায় গৃহসহায়িকা বা পরিচারিকাদের হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এর জেরে রাজ্য রাজনীতিতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটি নতুন করে চাগিয়ে তুলেছে বিজেপি।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য রবিবার একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করেছেন যে, উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি, বিশ্বরপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বহু পরিচারিকা SIR ঘোষণার পর হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গেছেন।

মালব্য এক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে দাবি করেন, “বিরাটিতে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা ‘রহিমার মা’ নামে পরিচিত এক মহিলা SIR ঘোষণার পরেই উধাও হয়ে যান। স্থানীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন— তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন!

তাঁর দাবি, এই জেলাতেই বিভিন্ন বাড়িতে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যাওয়ার আগে তাদের কেউ কেউ নাকি স্বীকারও করেছেন যে তারা বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে তবেই ফিরবেন।

মালব্য এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্ক-এর পলায়ন বলে কটাক্ষ করে বলেন, “একবার ভাবুন— বছরের পর বছর ধরে সিপিএম এবং তৃণমূল সরকার বাংলার মাটিতে এই অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়েছে, এমনকি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছে। এখন SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই তারা ব্যাগ গুছিয়ে পালাচ্ছে। কারণ, এইবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের রক্ষা করতে পারবেন না। ভারতে তাদের কোনো জায়গা নেই— আর অবশ্যই ভোটার তালিকায় নেই।”

বিজেপি প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছে, তৃণমূলের এই SIR-এর তীব্র বিরোধিতার মূল কারণ হলো তাদের ভয়, কারণ অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।

TMC : নিবিড় ভোটার সংশোধনে নাম বাদ! ২০০২ সালের তালিকা ধরে কারচুপির গুরুতর অভিযোগ তৃণমূলের

অভিষেকের পাল্টা আক্রমণ: বিজেপি সাংসদের মন্তব্যে ‘ভণ্ডামি’র প্রমাণ

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) প্রথম থেকেই SIR-কে বাংলায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) চাপিয়ে দেওয়ার বিজেপির একটি কৌশল বলে আসছে। এই আবহে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার-এর একটি মন্তব্যের সূত্র ধরে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন।

রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার সম্প্রতি একটি জনসভায় মন্তব্য করেন যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো কাঁটাতারের বেড়া থাকবে না।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করেন, জগন্নাথ সরকারের এই মন্তব্য বিজেপির ভণ্ডামির চরম উদাহরণ। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংসদের এই প্রকাশ্যে ঘোষণা — যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সীমান্ত থাকবে না এবং দুই দেশ আবারও এক হয়ে যাবে — সীমান্ত সুরক্ষায় রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না বলে বিজেপির অভিযোগের সম্পূর্ণ বিরোধী।

অভিষেক আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “একদিকে একই বিজেপি সরকার, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সীমান্ত ‘সুরক্ষার’ জন্য জমি না দেওয়ার জন্য দোষারোপ করছে, অথচ তাদেরই একজন সাংসদ সেই সীমান্ত মুছে ফেলতে চাইছেন!” তিনি আরও দাবি করেন, বিজেপি যদি সত্যই জাতীয় অখণ্ডতায় বিশ্বাসী হয়, তবে দলটির উচিত অবিলম্বে জগন্নাথ সরকারকে বহিষ্কার করা। “তাদের নীরবতা কেবল এটাই প্রমাণ করবে যে তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের পূর্ণ সম্মতি নিয়ে কথা বলেছেন। এটা জাতীয়তাবাদ নয়— এটা প্রতারণা।”

BJP Rally : নারী নির্যাতন, SIR এবং ভবানীপুর: তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করার বার্তা দিয়ে রাজপথে বিজেপি!

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন

তবে এটা দেখা যাচ্ছে যে তৃণমূল নেতারা অবৈধ অভিবাসীদের ভোটাধিকার ধরে রাখার উদ্যোগ নিয়ে কেবল শব্দ নিয়ে খেলা করছেন, যেহেতু ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে এটি তাদের ভোটব্যাঙ্কের একটি প্রধান অংশ। প্রায়শই সীমান্ত এলাকায় মানুষ অভিযোগ করেন যে ধর্মীয় ভিত্তিতে জনসংখ্যার পরিবর্তনের একটি সমস্যা রয়েছে, তার পাশাপাশি আরও অভিযোগ রয়েছে যে ধর্মীয়ভাবে নিপীড়িত শরণার্থীরা যারা ভারতে বসতি স্থাপন করেছেন, তাঁদেরও নির্বাচনের দিন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বছরভর একটি বড় অভিযোগ থাকে, যা নির্বাচনের সময় আরও বেড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর