election commission BLO

ব্যুরো নিউজ ৩ নভেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্য রাজনীতিতে চরম সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এবং প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) মধ্যে বিএলও (Booth Level Officer) নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।

বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ করা হয়েছে যে, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র-সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বা তাদের স্ত্রীদের বিএলও পদে নিয়োগ করা হয়েছে।

বিজেপি তাদের অভিযোগে বলেছে, “বারবার ডেও (DEO) এবং আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরেও বিএলও নিয়োগে অব্যবস্থা চলছেই। এইবারও আমরা এমন নিয়োগের তালিকা দিচ্ছি, যেখানে বহু ক্ষেত্রে বিএলও হয় সরাসরি তৃণমূল কর্মী/সমর্থক অথবা তাদের জীবনসঙ্গীর মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত।”

বিজেপির দাবি, যেহেতু আর কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে নির্বাচন, তাই দলীয় সংযোগযুক্ত বিএলওদের দিয়ে নির্বাচনী তালিকা সংশোধনের কাজ করানো হলে তা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। বিজেপি নন্দীগ্রাম এবং রানাঘাটের বিএলও-দের রাজনৈতিক যোগের প্রমাণ-সহ নাম নির্বাচন কমিশনকে জমা দিয়েছে এবং অবিলম্বে তাদের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

 

রানাঘাট ও বারাসাতেও একই অভিযোগ

 

নদিয়া জেলার রানাঘাট এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত এলাকাতেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, পুরো নদিয়া জেলাতেই বিএলও নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে।

  • রানাঘাট পৌরসভা: ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে আইসিডিএস কর্মী লিপিকা চক্রবর্তীকে বিএলও নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে বিরোধীদের দাবি।
  • বারাসাত: বারাসাত গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৭/৮৩ নম্বর বুথের বিএলও রূপা বৈরাগীর স্বামী তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য।

তবে তৃণমূল অবশ্য এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা জানিয়েছে যে, বিরোধীরা অযথা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। রানাঘাট–১ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও জানিয়েছেন, কর্মী সংকটের কারণেই বাধ্য হয়ে এই নিয়োগ করতে হয়েছে।

WB SIR ECI : বিএলওদের রিপোর্ট না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট কমিশন, কাজে যোগ না দিলে বরখাস্ত!

বিএলও শিক্ষকদের বিক্ষোভ: ‘অন ডিউটি’ ঘোষণা-সহ নিরাপত্তা দাবি

 

আগামী মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) থেকে রাজ্যে SIR-এর প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার কথা। এর আগে শনিবার কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ দেখান রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষকদের একাংশ, যাঁদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনী সংশোধনের কাজে অংশগ্রহণের জন্য তাদের তিনটি মূল দাবি রয়েছে:

১. ‘অন ডিউটি’ ঘোষণা: নির্বাচন কমিশন বা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয় থেকে লিখিত সার্কুলার দিতে হবে যে বিএলও-এর দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষকদের শিক্ষাদানের দায়িত্বে থাকতে হবে না এবং এই সময়কালকে “অন ডিউটি” হিসেবে গণ্য করা হবে। এক বিক্ষোভরত শিক্ষক বলেন, “লিখিত আশ্বাস না পেলে আমাদের অর্জিত ছুটি বা বেতনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।” ২. নিরাপত্তা সুনিশ্চিত: SIR-এর মাঠ পর্যায়ের ডিউটির সময় বিএলও-দের জন্য সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিক্ষোভরত আরেক শিক্ষক জানান, রাজ্যের কিছু পকেটে ইতিমধ্যেই বিএলও-দের কাছে হুমকি আসার খবর রয়েছে। ৩. ভোটগ্রহণের সংখ্যা: যে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ১২০০-এর বেশি, সেখানে দুজন বিএলও নিয়োগ করতে হবে।

WB SIR ECI : ভোটারদের সহায়তা প্রদানে কমিশনের তৎপরতা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্পত্তি আবশ্যক

SIR নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি, পথে নামছেন মমতা-অভিষেক

প্রথম থেকেই SIR প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়েই এই বিষয়ে সরব ছিলেন। মঙ্গলবার যখন রাজ্যে SIR শুরু হবে, সেই দিনই প্রতিবাদ জানাতে পথে নামছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর