ব্যুরো নিউজ ০৮ অক্টোবর ২০২৫ : আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির কড়া জবাব দিয়েছে তালিবান সরকার। তালিবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা আফগান ভূমির “এক মিটারও” আমেরিকানদের কাছে সমর্পণ করবে না। ট্রাম্পের এই দাবি ঘিরে আঞ্চলিক রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
বাগরাম দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান তালিবানের
তালিবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ‘টুলো নিউজ’-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তানের উপ-মুখপাত্র হামিদুল্লাহ ফিতরাত দোহা চুক্তির প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। ফিতরাত X (পূর্বতন ট্যুইটার)-এ পোস্ট করে জানান যে, দোহা চুক্তি অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের “আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বা হুমকির” ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
ফিতরাত আরও বলেন, “ইসলামিক নীতি এবং তার ভারসাম্যপূর্ণ, অর্থনীতি-ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে, ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান পারস্পরিক এবং ভাগ করা স্বার্থের ভিত্তিতে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।” তিনি যুক্ত করেন যে বাস্তববাদ এবং যৌক্তিকতার নীতি গ্রহণ করা উচিত।
ট্রাম্পের কঠোর হুঁশিয়ারি ও বাগরামের গুরুত্ব
গত কয়েকদিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের কথা বলছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই দাবি জানান। রবিবার তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ আরও কড়া মন্তব্য করে লেখেন, “যদি আফগানিস্তান যারা এটি তৈরি করেছে, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাগরাম বিমান ঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, তবে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে!!!”
বাগরাম বিমান ঘাঁটি ছিল ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাড়াহুড়ো করে প্রত্যাহারের আগে আফগানিস্তানে তাদের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি। কাবুল থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঘাঁটি থেকে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল পর্যন্ত এক ঘণ্টার বিমানপথ। এই ঘাঁটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এবং চীনকে নজরদারিতে রাখতে চায়। পাশাপাশি ইরানের উপরও নজর রাখার উদ্দেশ্য রয়েছে।
মস্কো ফর্ম্যাট: বিদেশি সামরিক পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে ভারত-সহ ১০ দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তালিবানের কাছে কৌশলগত বাগরাম বিমান ঘাঁটি হস্তান্তরের আহ্বান জানানোর মধ্যেই মঙ্গলবার ভারত, রাশিয়া, চীন-সহ আরও সাতটি দেশ আফগানিস্তানে বিদেশি সামরিক পরিকাঠামো স্থাপনের যেকোনো পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
সাম্প্রতিক “মস্কো ফর্ম্যাট” আলোচনায় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে উৎসাহিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির প্রতিনিধিরা একত্রিত হন। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বিবৃতি দিয়ে জানায়, “আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে দেশগুলির সামরিক পরিকাঠামো স্থাপনের প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য, কারণ এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে কাজ করে না।”
ভারতের পাশাপাশি, এই বৈঠকে রাশিয়া, চীন, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান অংশ নেয়।
সন্ত্রাস মোকাবিলায় জোর: প্রথমবার যোগ দিলেন মুত্তাকি
এই মস্কো ফর্ম্যাট আলোচনায় এই প্রথম তালিবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি যোগ দিলেন, যা আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে তালিবানের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আলোচনার সময় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক উভয় স্তরেই সন্ত্রাস মোকাবিলা সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তাঁরা জোর দেন যে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে এটিকে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করা উচিত, যাতে আফগান মাটি প্রতিবেশী দেশ এবং তার বাইরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে ব্যবহার না হয়।” দেশগুলি আরও জোর দিয়ে বলেছে যে সন্ত্রাসবাদ আফগানিস্তান, এই অঞ্চল এবং বৃহত্তর বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে।
ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার। মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, কুমার একটি স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল আফগানিস্তান এবং আফগান জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রাশিয়া জোর দিয়ে জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানকে মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে আগ্রহী।




















