ব্যুরো নিউজ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : লেহ্-তে ২৪শে সেপ্টেম্বর পুলিশি গুলিতে নিহত চারজনের মধ্যে দুইজনের শেষকৃত্য রবিবার শোকাবহ পরিবেশে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হল। নিহতদের শেষকৃত্যে কেবল নিকটাত্মীয়দের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল এবং শহর জুড়ে টানা পঞ্চম দিনের জন্য কার্ফু জারি ছিল।
অতিরিক্ত জণসমাগম ঠেকাতে লাদাখ পুলিশ, আইটিবিপি এবং সিআরপিএফ-এর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল গোটা শহর জুড়ে এবং শেষকৃত্যের পথে।
মৃতদের পরিচয় ও শারীরিক আঘাতের বিবরণ
পুলিশের গুলিতে নিহত চারজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন কুড়ি-র কোঠার তরুণ এবং একজন ছিলেন কার্গিল যুদ্ধের অভিজ্ঞ সৈনিক। রবিবার জিগমেত দোর্জে (২৫) এবং স্ট্যানজিন নামগিয়াল (২৩)-এর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। অন্য দুই নিহত — রিঞ্চেন দাদুল (২০) এবং কার্গিল যুদ্ধে লড়া প্রবীণ সৈনিক তাসেওয়াং থারচিন (৪৬)-এর শেষকৃত্য সোমবার হওয়ার কথা রয়েছে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, নিহতদের বুকে ও মাথায় একাধিক বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে নির্বিচার গুলি চালানো হয়েছিল। এছাড়া, ফুসফুসে গুলির আঘাত নিয়ে এক তরুণীকে জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য দিল্লি এইমস-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহত ৯০ জনের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।
নিহত থারচিনের ছোট ভাই কোনচোক ইশলে জানান, “তিনি কার্গিল যুদ্ধের সময় সাহসের সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, কিন্তু সেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর পুলিশের গুলিতে নিহত হলেন।”
Sonam Wangchuk : হিংসাত্মক উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার জেরে গ্রেফতার সোনাম ওয়াংচুক; CBI, ED তদন্তের মুখে।
সোনাম ওয়াংচুকের মুক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
লাদাখের পূর্ণাঙ্গ রাজ্য মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (NSA)-এর অধীনে ধৃত পরিবেশ কর্মী সোনাম ওয়াংচুককে বর্তমানে রাজস্থানের যোধপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। লাদাখ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অ্যাপেক্স বডির নেতারা ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে “মিথ্যা” বলে দাবি করে তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জোরদার করেছেন।
এদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন যে বিজেপি এবং আরএসএস লাদাখের মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ করছে। তিনি টুইটারে (X-এ) পোস্ট করে লাদাখকে অবিলম্বে ষষ্ঠ তফসিলের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদকে ভূমি ব্যবহার, বন এবং জলসম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ দেবে।
অন্যদিকে, বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই পুলিশি ফায়ারিং-এর ঘটনার একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কঠোর সতর্কতা
লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তা রবিবার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কঠোর বার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন যে, কেউ যদি হিংসা বা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর জোর দেন এবং আশ্বাস দেন যে লাদাখের মানুষের অধিকার, আকাঙ্ক্ষা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করতে প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার এবং শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা করার আবেদন জানান। লাদাখ একটি সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চল হওয়ার দরুন জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থে , কোনও ধরণের বিচ্ছিনতা বাদী বা হিংসাত্মক আন্দোলনের প্রচেষ্টা কড়া ভাবে দমন প্রত্যাশিত ।