ব্যুরো নিউজ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০৪৭ সালের মধ্যে উত্তর প্রদেশকে এক ‘বিকশিত ইউপি’ হিসেবে গড়ে তোলার এক দূরদর্শী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এই স্বপ্নের মূল ভিত্তি হলো গ্রামীণ যুবক, বিশেষ করে সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বর্গ ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী) সম্প্রদায়ের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা, পাশাপাশি গ্রামের পরিচ্ছন্নতা এবং পরিকাঠামোর উন্নয়ন।
সরকার মনে করে, আগামী ২২ বছরে এই ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক অগ্রগতি হলে উত্তর প্রদেশ $৬ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং ভারতের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ওবিসিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পিছড়া বর্গ কল্যাণ বিভাগ
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫২%-এর বেশি অংশ নিয়ে গঠিত ওবিসি সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছে ‘পিছড়া বর্গ কল্যাণ বিভাগ’। গত আট বছরে এই বিভাগ ওবিসিদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে, শুধুমাত্র ৩২.২২ লক্ষ ওবিসি ছাত্রছাত্রী বৃত্তি এবং ফি ফেরতের সুবিধা পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ২.০৭ কোটি শিক্ষার্থীকে ১৩,৫৩৫.৩৩ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী সরকারের ৪,১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ের চেয়ে চার গুণ বেশি। এটি ওবিসিদের ক্ষমতায়নের প্রতি যোগী সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
বিতর্কিত OBC তালিকা সংশোধনে পক্ষপাত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের , NCBC-র আপত্তিতে নতুন মাত্রা
শিক্ষায় বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রকল্প
পিছড়া বর্গ কল্যাণ বিভাগের লক্ষ্য হলো ২০৪৭ সালের মধ্যে ৭ কোটিরও বেশি ওবিসি শিক্ষার্থীকে ৮০,০০০ কোটি টাকার বৃত্তি এবং ফি ফেরত প্রদান করা, যা শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সমতা নিশ্চিত করবে। এই পদক্ষেপ গ্রামীণ ওবিসি যুবকদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
আর্থিকভাবে দুর্বল ওবিসি মেয়েদের জন্য ‘শাদি অনুদান যোজনা’ একটি পরিবর্তনশীল উদ্যোগ হিসেবে কাজ করছে। গত আট বছরে ৬.১ লক্ষ মেয়ের বিয়েতে ১,২২১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে পূর্ববর্তী সরকারের সময় মাত্র ২.৭৫ লক্ষ সুবিধাভোগী ৩৪৪ কোটি টাকা পেয়েছিল। উত্তর প্রদেশ সরকার এখন এই অনুদান ২০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০,০০০ টাকা করার কথা ভাবছে, যার ফলে ২০৪৭ সালের মধ্যে ২৪ লক্ষ মেয়ে উপকৃত হবে এবং এর জন্য ১৪,৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এই পদক্ষেপ ওবিসি পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করবে, দারিদ্র্য দূর করবে এবং মেয়েদের মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবে।
প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও আবাসন সুবিধা
বিভাগের অধীনে পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে গত আট বছরে ১,৩৯,৬৯৮ জন ওবিসি যুবককে সিসি সি (CCC) এবং ও-লেভেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা হাজার হাজার যুবককে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান পেতে সাহায্য করেছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ১১ লক্ষ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং ৩,৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।
ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন হোস্টেল নির্মাণ এবং পুরনো হোস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী বিনামূল্যে আবাসন সুবিধা পেতে পারে। এই পদক্ষেপ গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার সুযোগের অভাব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ ও দিব্যাঙ্গজন ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব) নরেন্দ্র কাশ্যপ বৃহস্পতিবার বলেন, গ্রামীণ এলাকায় ওবিসি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছাড়া উন্নয়ন অসম্পূর্ণ। তার মতে, পিছড়া বর্গ কল্যাণ বিভাগের এই উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র ওবিসি যুবকদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন ওবিসি সম্প্রদায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষায় সমান সুযোগ পাবে, তখনই ৬ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির লক্ষ্য পূরণ হবে। এই ভিশনের মাধ্যমে বিভাগটি ওবিসি সম্প্রদায়কে মূলধারায় নিয়ে এসে উত্তর প্রদেশকে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে চলেছে।