wayanad congress rally

ব্যুরো নিউজ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : কেরালায় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওয়ানাদ এখন দলীয় নেতাদের জন্য একটি ‘কবরস্থান’-এ পরিণত হচ্ছে। পরপর তিনজন নেতার আত্মহত্যা কংগ্রেসকে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। লোকসভার সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা এই ঘটনায় জেলা কংগ্রেস কমিটির (DCC) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিগত দুই বছরে ওয়ানাদ জেলা কংগ্রেস কমিটির কোষাধ্যক্ষসহ কমপক্ষে চারজন কংগ্রেস নেতা আত্মহত্যা করেছেন। অভিযোগ, আর্থিক সমস্যা এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এর মূল কারণ।

 

জোসে নেল্লাডামের মৃত্যু ও দলীয় কোন্দল

সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাটি হলো জোসে নেল্লাডামের মৃত্যু, যা ওয়ানাদ কংগ্রেসের রাজনীতির পুরনো ক্ষতকে নতুন করে উন্মোচন করেছে। শুক্রবার তার বাড়ির কাছে একটি পুকুরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ, তিনি বিষ পান করে এবং হাতের শিরা কেটে পুকুরে ঝাঁপ দেন।

জোসে নেল্লাডাম, যিনি মুল্লানকলি পঞ্চায়েতের একজন ওয়ার্ড সদস্য ছিলেন, তার বিরুদ্ধে সহকর্মী নেতা থানকাচান কান্নাত্তুমালয়িলের বিরুদ্ধে একটি সাজানো মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। থানকাচানকে মদ এবং বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু ১৬ দিন পর জেল থেকে বেরিয়ে তিনি অভিযোগ করেন যে এটি ডিসি সি সভাপতি এন ডি আপ্পাচান গোষ্ঠীর একটি ষড়যন্ত্র, যার নেতৃত্বে ছিলেন জোসে নেল্লাডাম।

এই অভিযোগের পর জোসে নেল্লাডামের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা শুরু হয়। তার সুইসাইড নোটে জোসে নেল্লাডাম লিখেছেন: “এই সংকটের সময় দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টে আমাকে চরম সাইবার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে।”

Kerala : কেরালার আলেপ্পিতে পোড়া মানবদেহাংশ উদ্ধার , ৬ মহিলার নিখোঁজ রহস্য

আগের ঘটনা: এন এম বিজয়ন এবং অন্যান্যদের মৃত্যু

২০২৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ডিসি সি-এর প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ এন এম বিজয়ন এবং তার ছেলে জিজেশ আত্মহত্যা করেন। অভিযোগ, দলের নেতাদের জড়িত থাকার কারণে জেলার কয়েকটি সমবায় ব্যাংকে নিয়োগ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে গিয়ে তিনি বিপুল ঋণে জর্জরিত হয়েছিলেন।

বিজয়নের সুইসাইড নোটে তিনি সরাসরি আপ্পাচান এবং প্রবীণ বিধায়ক আই সি বালাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, কীভাবে নেতাদের চাপে ঋণ নিতে গিয়ে তার দেনা ৬৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়, এবং আর্থিক সংকট তীব্র হলে দল তাকে পরিত্যাগ করে।

 

প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষের সুইসাইড নোট

২০২৫ সালের জানুয়ারীতে বিজয়নের পরিবার তার সুইসাইড নোট প্রকাশ করে, যা কেরালা কংগ্রেস নেতৃত্বকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। নোটে আর্থিক ঋণ, সমবায় ব্যাংকে ঘুষ নেওয়ার ঘটনা এবং দলের প্রতি তার সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সংকটের সময়ে অবহেলার অভিযোগ ছিল। প্রাক্তন কেপিসিসি সভাপতি কে সুধাকরণকে পাঠানো একটি চিঠিতে বিজয়ন উল্লেখ করেন যে বিধায়ক আই সি বালাকৃষ্ণন বিভিন্ন সমবায় ব্যাংকে নিয়োগের জন্য টাকা নিয়েছিলেন।

বিজয়ন তার নোটে বিভিন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থের বিবরণ, এবং আই সি বালাকৃষ্ণন, এন ডি আপ্পাচান ও কে কে গোপীনাথনের মতো নেতাদের নাম উল্লেখ করেন, যারা এই তহবিল পেয়েছিলেন। তিনি তার সুইসাইড নোটটি কংগ্রেস নেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তার ছেলে বিজেশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজয়নের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১.৫ কোটি টাকার দেনা ছিল।

Kerala : খুনের আসামিদের ‘নায়কের’ মর্যাদা দিচ্ছে CPI(M), বাম শাসিত রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির

পূর্বেকার ঘটনা এবং পার্টির প্রতিক্রিয়া

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে প্রবীণ নেতা পি ভি জন দলের অফিসে আত্মহত্যা করেন। অভিযোগ ছিল, স্থানীয় নির্বাচনে দলেরই একাংশ তার বিরুদ্ধে একজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন করায় তিনি একা হয়ে পড়েন। ২০২৩ সালে দলীয় কর্মী রাজেন্দ্রন নায়ার আত্মহত্যা করেন। ইডি-র (Enforcement Directorate) তদন্তে পুল্লাল্লি কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঋণ সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।

এই ধারাবাহিক ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্ব এই সংকট মোকাবিলায় সামান্যই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জোসে নেল্লাডামের মৃত্যুর পর কেপিসিসি সভাপতি সানি জোসেফ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের দায় এড়িয়ে গিয়ে থানকাচানের বাড়ি থেকে মদ ও বিস্ফোরক উদ্ধারের জন্য পুলিশকে দায়ী করেন।

এদিকে, শনিবার এন এম বিজয়নের পুত্রবধূ পদ্মজা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে দল তাদের দেনা শোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যা তারা পূরণ করেনি।

ওয়ানাদ, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা, যেখানে বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার জন্য তীব্র লড়াই চলে। এই লোকসভা কেন্দ্রটি সম্প্রতি কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই কেন্দ্রে কি অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য, নাকি সংখ্যালঘু সদস্যদের চাপের মুখে রাজনৈতিক বলিদান চলছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর