ব্যুরো নিউজ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে একটি ছোট বিবাদকে কেন্দ্র করে এক কিউবান অভিবাসীর হাতে এক ভারতীয় নাগরিক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। ডালাসের ‘ডাউনটাউন স্যুইটস’ মোটেলে ৫০ বছর বয়সী চন্দ্র নাগমাল্লাইয়াকে প্রকাশ্যে তাঁর স্ত্রী ও ছেলের সামনে একটি মাচেট (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে বারবার আঘাত করে শিরশ্ছেদ করা হয় এবং তারপর সেই মুণ্ড নিয়ে অভিযুক্ত ফুটবল খেলে। অভিযুক্তের নাম ইয়োরদানি কুবোস-মার্তিনেজ (৩৭), যিনি একজন পরিচিত অপরাধী এবং সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও ঘটনার বিবরণ
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কুবোস-মার্তিনেজ মাচেট হাতে চন্দ্রকে হোটেলের করিডোরে তাড়া করছেন। চন্দ্র তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে চিৎকার করে দূরে থাকতে বললেও, ১৮ বছর বয়সী ছেলেটি বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। তবে কুবোস-মার্তিনেজ তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হামলা চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে চন্দ্রের ছেলে ব্যাট নিয়ে পাল্টা আঘাত করতে এলেও ততক্ষণে তার বাবা প্রাণ হারিয়েছেন। অভিযুক্ত কুবোস-মার্তিনেজ এরপর চন্দ্রের মাথাটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিতে ফেলে দেয়। আরো একটি ভয়াবহ ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত বিচ্ছিন্ন মাথাটিকে ফুটবল খেলার মতো লাথি মারছে এবং পরে একটি ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে।
আসল বিবাদটি শুরু হয়েছিল একটি ভাঙা ওয়াশিং মেশিন নিয়ে। চন্দ্র নাগমাল্লাইয়া অভিযুক্তকে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে নিষেধ করলে কুবোস-মার্তিনেজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার অভিযোগ ছিল, চন্দ্র সরাসরি তার সাথে কথা না বলে একজন সাক্ষীর মাধ্যমে অনুবাদ করিয়েছিলেন, যা তাকে অপমানিত করে। এরপরই সে মাচেট নিয়ে আক্রমণ শুরু করে।
অভিযুক্তের পরিচয় ও অপরাধের ইতিহাস
ইয়োরদানি কুবোস-মার্তিনেজ একজন কিউবান অভিবাসী এবং আইনি কাগজপত্রহীন ব্যক্তি (illegal alien)। তার অপরাধের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গাড়ি চুরি, মিথ্যা কারাবন্দী এবং শিশু যৌন নির্যাতন। আইসিই-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিউবা সরকার অপরাধের রেকর্ডের কারণে তাকে ফেরত নিতে অস্বীকার করলে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
এই নৃশংস ঘটনায় ভারত সরকার গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউস্টনে অবস্থিত ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল এক বিবৃতিতে চন্দ্র নাগমাল্লাইয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। কনস্যুলেট নিশ্চিত করেছে যে তারা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ডালাস পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং ভারত সরকার পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিতর্ক
এই হত্যাকাণ্ড দ্রুতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা এবং অবৈধ অভিবাসনের ইস্যুগুলো বর্তমানে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
ট্রাম্পের তীব্র নিন্দা ও বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি চন্দ্র নাগমাল্লাইয়াকে একজন “সুপরিচিত ব্যক্তি” হিসেবে অভিহিত করে বলেন যে, কিউবার একজন “অবৈধ অভিবাসীর” হাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার আমেরিকায় থাকারই কথা ছিল না। ট্রাম্প সরাসরি বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করে বলেন, কুবোস-মার্তিনেজ তার অপরাধের ইতিহাস সত্ত্বেও বাইডেনের “অদক্ষতার” কারণে মুক্তি পেয়েছিল। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তার অধীনে অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি কোনো প্রকার নরম মনোভাব দেখানো হবে না।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিবৃতি: ‘তৃতীয় দেশ’-এ বিতাড়নের ঘোষণা: ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) এই হত্যাকাণ্ডকে “সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য” বলে অভিহিত করে। এক বিবৃতিতে DHS জানায়, এই ধরনের অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের, যাদের নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে চায় না, তাদের এখন থেকে ‘তৃতীয় দেশে’ (যেমন এসোয়াতিনি, উগান্ডা বা সাউথ সুদান) বিতাড়ন করা হবে। তারা এই ঘটনাকে ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা সেফ এগেইন’ নীতির প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট: আমেরিকায় নিরাপত্তা উদ্বেগ
চন্দ্র নাগমাল্লাইয়ার এই হত্যাকাণ্ড আমেরিকায় চলমান নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং ঘৃণা-প্রসূত অপরাধের একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনাটি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল এই হত্যাকাণ্ডকে বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসন নীতির ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।