ব্যুরো নিউজ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : নেপালে সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কীর বাসভবনের বাইরে ‘হামি নেপাল’ নামক একটি যুব গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন সুদন গুরুং, যিনি গত সপ্তাহেই সুশীলা কার্কীকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য জোরদার আন্দোলন চালিয়েছিলেন।
মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ এবং বিক্ষোভের কারণ
সোমবার প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কী তার অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় তিন নতুন মন্ত্রীকে নিযুক্ত করার পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এই তিন মন্ত্রী হলেন:
- কুলমান ঘিসিং: প্রাক্তন নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (NEA)-এর প্রধান এবং নেপালের ‘পাওয়ার হিরো’ নামে পরিচিত। তিনি ভারতের জামশেদপুরে পড়াশোনা করেছেন।
- রাম আশোর খানাল: প্রাক্তন অর্থ সচিব। তিনিও ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
- ওম প্রকাশ আর্যল: একজন প্রবীণ আইনজীবী যিনি ভারতীয় আইনি পেশাদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন।
এই নিয়োগগুলিকে ‘দক্ষ এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের’ সঠিক নির্বাচন হিসেবে অনেকে স্বাগত জানালেও, সুদন গুরুং-এর ‘হামি নেপাল’ গোষ্ঠী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা অভিযোগ করেছে যে প্রধানমন্ত্রী কার্কী তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাদের আন্দোলনকে উপেক্ষা করেছেন। রাতভর বিক্ষোভ চলাকালীন তারা “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করুন” এবং “মৃতদের নিয়ে রাজনীতি করবেন না” স্লোগান দিতে থাকে।
সুদন গুরুংয়ের অবস্থান
বিক্ষোভের সময় সুদন গুরুং বলেন, “নেপালের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি হল জনগণ। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা যদি কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারি, তবে আমরা তাকে সরিয়েও দিতে পারি।” গুরুংয়ের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তিনি সুশীলা কার্কীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার পায়ে মাথা ঠেকিয়েছিলেন। এই দ্রুত সম্পর্ক অবনতি অনেককেই অবাক করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য এবং চ্যালেঞ্জ
প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তার সরকার কেবল একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা। তার প্রধান কাজ হলো আগামী মার্চ মাসের ৫ তারিখের মধ্যে নতুন নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং দেশকে একটি স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেছেন যে তার প্রশাসন ‘ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের জন্য’ গঠিত হয়নি, বরং একটি সংবেদনশীল রূপান্তরের সময়ে দেশকে স্থিতিশীল করতে এসেছে।
এই অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জেন-জি’ প্রজন্মের বিক্ষোভের চাপে গঠিত হয়েছিল, যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। ঐ বিক্ষোভে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। বিক্ষোভের পর কাঠমান্ডুর জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল, কিন্তু নতুন করে এই রাজনৈতিক সংঘাত আবার অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
‘হামি নেপাল’ গোষ্ঠী এবং এর সংযোগ
‘হামি নেপাল’ একটি অরাজনৈতিক এনজিও হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও, এর চেয়ারম্যান সুদন গুরুং-এর রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের ওয়েবসাইটে আল জাজিরা, কোকা-কোলা, ভাইবার এবং গোল্ডস্টারের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সমর্থন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই গোষ্ঠীর প্রভাবের বিস্তৃতি ইঙ্গিত করে। এই গোষ্ঠী নেপালের রাজনৈতিক পটভূমিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং তাদের বিক্ষোভের ফলে সুশীলা কার্কীর সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।