ব্যুরো নিউজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার একটি মন্তব্যের জেরে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলা ‘সেবা পাক্ষিক’-এর অংশ হিসেবে দুর্গাপূজা কমিটিগুলোকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি “মা দুর্গার পায়ের কাছে” রেখে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ চাওয়ার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন ও বিতর্ক
শনিবার রামলীলা ও দুর্গাপূজা কমিটিগুলোর জন্য ১,২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুতের ঘোষণা করার সময় রেখা গুপ্তা এই অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির জন্মদিনও ১৭ই সেপ্টেম্বর। আমরা চাই এবার দিল্লি তার জন্মদিনকে সেবা পাক্ষিক হিসেবে পালন করুক। আমি চাই, আমাদের দুর্গাপূজার প্যান্ডেলগুলোতেও দিনের বেলায় আপনারা জনগণের জন্য কোনো না কোনো সেবামূলক কাজ করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য, অবশ্যই সেখানে মায়ের পায়ের কাছে তার ছবি রেখে তার জন্য আশীর্বাদ নিন।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)। আপের দিল্লি রাজ্য সভাপতি সৌরভ ভরদ্বাজ অভিযোগ করেন যে বিজেপি “বাঙ্গালির আত্মসম্মান” কিনতে চাইছে। তিনি বলেন, “বাঙ্গালি ভাইবোনদের কি মা দুর্গার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীরও পূজা করতে হবে? ১,২০০ ইউনিট বিনামূল্যে বিদ্যুৎ মানে বিজেপি সরকার ১২,০০০ টাকায় বাঙালীর আত্মসম্মান ও বিশ্বাস কিনতে চাইছে।”
আপ এবং তৃণমূলের অপপ্রচার
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ঘিরে আপ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করেছে। যেখানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি মায়ের চরণে শুধুমাত্র আশীর্বাদের জন্য রাখার কথা বলেছেন, সেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত দুটি দল সমাজে এই বার্তা ছড়াচ্ছে যে এবার মা দুর্গার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও পূজা করা হবে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে কিছু সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে বলা হচ্ছে যে, বিজেপি দুর্গাপূজাকে একটি রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করছে।
বিজেপির পাল্টা জবাব
আপের অভিযোগকে “রাজনৈতিক সুবিধাবাদ” আখ্যা দিয়ে দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র প্রবীণ শঙ্কর কাপুর বলেন, “দিল্লিবাসী ভালো করেই জানেন যে কীভাবে কেজরিওয়াল সরকার বিভিন্ন পূজা কমিটিকে কেজরিওয়াল, সিসোদিয়া এবং স্থানীয় বিধায়কদের ব্যানার ও ছবি লাগাতে বাধ্য করেছিল।” দিল্লি বিজেপির প্রধান বীরেন্দ্র সচদেভাও বলেন, ছট পুজোর সময় আপ কীভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ছবি ব্যবহার করেছিল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দুর্গাপূজা কমিটিগুলিও প্রায় নিলামের পদ্ধতিতে সরকারি অনুদান পায়। এই অনুদানপ্রাপ্ত প্যান্ডেলগুলিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যানার লাগানো বাধ্যতামূলক। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এই ধরনের রাজনীতি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তাই আশা করা যায়, এই দুর্গাপূজার রাজনৈতিকরণ সত্ত্বেও রাজ্যবাসী প্রকৃত সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে আলাদা করতে সক্ষম হবে।
রেখা গুপ্তার এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হলেও বিজেপির পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার তৃণমূলের বিরুদ্ধে বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী তার ৭৫ বছর পূর্ণ করছেন, তাই তার ছবি মায়ের পায়ের কাছে রাখলে তিনি আশীর্বাদ পাবেন।