ব্যুরো নিউজ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। একই সময়ে, তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত SCO (Shanghai Cooperation Organisation) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনৈতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাশিয়ার তেলের দাম কমছে, মার্কিন শুল্কের চাপ বাড়ছে
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যেও ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আরও সস্তা হয়েছে। মিডিয়ার তথ্য অনুসারে, উরাল অপরিশোধিত তেলের দাম এখন প্রতি ব্যারেল ৩ থেকে ৪ ডলার ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে, যা ব্রেন্ট তেলের দামের তুলনায় অনেক কম। এই মূল্য হ্রাস এমন সময়ে ঘটছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করার দায়ে ভারতকে শাস্তি হিসেবে ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ন্যায্য বলে দাবি করেছেন, কারণ ভারত ছাড়যুক্ত মূল্যে রাশিয়ান তেল কেনা চালিয়ে যাচ্ছে।
India-US trade : ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদী উভয় পক্ষ
পিটার নাভারোর প্রলাপ
SCO শীর্ষ সম্মেলনের পর, প্রাক্তন মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো তার মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন। নাভারো অভিযোগ করেছেন যে রাশিয়া ভারতকে ছাড়যুক্ত অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করে, যা ভারত পরিশোধন করে ইউরোপ এবং আফ্রিকায় উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লাভ করছে। তার মন্তব্যে তিনি একটি স্পর্শকাতর শব্দ ব্যবহার করে বলেছেন যে “ব্রাহ্মণরা ভারতীয় জনগণের খরচে মুনাফা করছে”, যা অনলাইনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নাভারো আরও বলেন যে ইউক্রেনে চলমান সংঘাত “মোদী’র যুদ্ধ”, কারণ ভারতের তেল কেনা রাশিয়াকে পরোক্ষভাবে অর্থায়ন করছে। তিনি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে “লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং মোদীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ভারতকে “ক্রেমলিনের লন্ড্রোম্যাট” ( ক্রেমলিনের ওয়াশিং মেশিন ) বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
যদিও পিটার নাভারোর প্রলাপ বকার শেষ নেই , তার মতে বিশ্বেজুড়ে বর্ধিত জ্বালানী মুল্যের থেকে যে রক্ষা পেয়েছে ভারতবাসি তাতে লাভ শুধু ব্রাহ্মণদের ? এইখানে ঠিক কোন ব্রাহ্মণদের কথা বলতে চাইলেন এই মার্কিন ব্যক্তি তা বোঝা দায় ! না দেশের তৈল আমদানি সংস্থাগুলো ব্রাহ্মণদের না দেশের পরিশোধিত তৈল রফতানির সংস্থা গুলো ব্রাহ্মণদের । এই সংস্থাগুলিতে ভারতের সমস্ত রকম জাতির মানুষরা নিয়জিত !
দ্বিতীয় , উক্রেনের যুদ্ধ মোদীর যুদ্ধ কেন ? বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার এবং তারপরে বার বার বলেছে যে এই সংগ্রাম প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের এবং সে একা দায়ী । তৃতীয়, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশ্বের সবচেয়ে অভিনব ওয়াশিং মেশিন পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষ মুনিরের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক স্থাপন করেছেন সাম্প্রতিককালে – কালো টাকা সাদা করে সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগানোতে গোটা বিশ্বে পাকিস্তানের মতন কেউই নেই , যার প্রমাণ পাকিস্তানের বারংবার FATF ধূসর তালিকায় যাত্রা থেকে পাওয়া যায় ! সেক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের লন্ড্রোম্যাটের সাথে উঠতে বস্তে আপত্তি নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের – কিন্তু ন্যায্য বাণিজ্য আপত্তিকর ? !!
তাই মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের ভিন্ন বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে , যেকোনও প্রকারে মার্কিন বিদেশনীতি নির্ধারণ করলেই হবে , বেশি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন আভ্যন্তরীণ রাজনীতি । সুতরাং মার্কিন বিদেশনীতি এই মুহূর্তে প্রহসনে পরিণত হয়েছে ।
SCO শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর কূটনৈতিক পদক্ষেপ
তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত SCO শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কথোপকথন করেন। SCO পরিবারের ছবি তোলার আগে তিন নেতাকে একসঙ্গে হাসতে ও কথা বলতে দেখা যায়। এই বৈঠককে অনেকেই ট্রাম্পের “ধমক” আচরণের জবাবে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার উত্থানের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। রাশিয়ান মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোদী এবং পুতিন পরে ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৫০ মিনিট ধরে পুতিনের গাড়িতে করে গোপনে আলোচনা করেন।