ব্যুরো নিউজ ২৬শে আগস্ট ২০২৫ : মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লো। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক দিন পর ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানী সানার কয়েকটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। হুতি নিয়ন্ত্রিত সূত্র অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে। এই হামলা ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিশোধমূলক কার্যক্রমের সর্বশেষ ঘটনা।
হামলার লক্ষ্যবস্তু
হুতি মিডিয়ার মতে, সানার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, একটি সামরিক স্থাপনা, একটি তেলের ডিপো এবং দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দাবি করেছেন যে হুতিদের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘনবসতিপূর্ণ সাবেইন স্কোয়ারের কাছে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটেছে, যার ফলে আশেপাশের ভবনগুলোর জানালা ভেঙে গেছে এবং কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলার পর বলেছেন, “যে আমাদের উপর হামলা করবে, আমরা তার উপর হামলা করব। যে আমাদের উপর হামলা করার পরিকল্পনা করবে, আমরা তার উপর হামলা করব।” তিনি আরও বলেন, “হুতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসনের জন্য খুব চড়া মূল্য দিচ্ছে।”
Kerala Nurse : হুথি জঙ্গি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনে কেরালার নার্সের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা !
হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
এই হামলার কয়েক দিন আগে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যা ইসরায়েলের বৃহত্তম বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি মাঝ আকাশে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান যে এটি একটি ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র ছিল, যা একাধিক বিস্ফোরকে বিভক্ত হয়ে যায় এবং এটিকে প্রতিহত করা কঠিন করে তোলে। ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুতিদের এটি প্রথম ক্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কাৎজ সতর্ক করে বলেন, “হুতিরা ইসরায়েলের দিকে যত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে, তার জন্য তাদের বহু গুণ বেশি মূল্য দিতে হবে।”
আঞ্চলিক সংঘাতের প্রেক্ষাপট
গত ২২ মাস ধরে হুতিরা গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগরে ইসরায়েল এবং বাণিজ্যিক জাহাজের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। এসব হামলায় বৈশ্বিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ বিঘ্নিত হয়েছে।
গত মে মাসেও ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সানার বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছিল, যেখানে ছয়টি যাত্রীবাহী বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রবিবার সানায় চালানো সর্বশেষ এই হামলাগুলো ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের আঞ্চলিক বিস্তারকে তুলে ধরে। একইসাথে, হুতিদের হাতে থাকা উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কারণে যে ঝুঁকি বাড়ছে, তাও স্পষ্ট হচ্ছে।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
এই সংঘাতের কারণে ইয়েমেনে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অঞ্চলে আরও ব্যাপক সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এখন পর্যন্ত রবিবার রাতের হামলায় হতাহতের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, তবে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে প্রতিশোধমূলক হামলা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

















