ব্যুরো নিউজ ২৬শে আগস্ট ২০২৫ : কলকাতায় যেমন বাগবাজার সর্বজনীনের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা প্রতি বছর কোনো বিশেষ থিম বা আধুনিক মণ্ডপসজ্জা ছাড়াই হাজার হাজার দর্শনার্থী আকর্ষণ করে, তেমনই প্রতি বছর গণেশ চতুর্থীর মহোৎসবে মুম্বাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণেশ মূর্তি ‘লালবাগচা রাজা’ দেখতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় জমান। এই মূর্তিটি শুধু ভক্তি ও বিশ্বাসের প্রতীকই নয়, এটি বোম্বাইয়ের সংস্কৃতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সবাই এই মূর্তির জনপ্রিয়তা এবং বিশাল ভিড়ের কথা জানলেও, এর পেছনের অনেক আকর্ষণীয় তথ্য অনেকেরই অজানা।
লালবাগচা রাজার উদ্ভব
১৯৩৪ সালে প্রথমবার লালবাগচা রাজার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সময় স্থানীয় জেলে এবং কল-শ্রমিকরা লালবাগের একটি বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবিকা হারিয়েছিলেন। তখন তারা একটি স্থায়ী বাজারের জন্য ভগবান গণেশের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। যখন তাদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়, তখন কৃতজ্ঞতা জানাতে তারা গণেশ মূর্তি স্থাপন শুরু করেন। সেই থেকে লালবাগচা রাজা ‘নবসাচা গণপতি’ অর্থাৎ মনস্কামনা পূরণকারী গণেশ হিসেবে পরিচিত।
Ganesh Chaturthi : বিঘ্নহর্তা গণেশের শ্রেষ্ঠ ৫ মন্দির, গণেশ চতুর্থী উদযাপনে ভক্তদের আকর্ষণ
বিশাল ভক্ত সমাগম
লালবাগচা রাজার জনপ্রিয়তা তুলনাহীন। প্রতি বছর গণেশ চতুর্থীর ১০ দিনের উৎসবে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ ভক্ত এই মণ্ডপে আসেন। শুধু ভারত নয়, বিদেশ থেকেও অনেকে এখানে এসে আশীর্বাদ নেন। এখানে ভক্তদের জন্য দুটি আলাদা লাইন থাকে: একটি ‘নবসাচি লাইন’ যেখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য ভক্তরা প্রার্থনা করেন এবং অন্যটি ‘মুখ দর্শন লাইন’ যা শুধু মূর্তি দেখার জন্য।
ঐতিহ্যবাহী মূর্তি
১৯৩৫ সাল থেকে এই মূর্তির বসার ভঙ্গি একইরকম রয়েছে। সিংহাসনে উপবিষ্ট, ডান হাত আশীর্বাদের ভঙ্গিতে তোলা – এই বিশেষ ভঙ্গিটি লালবাগচা রাজাকে সহজেই চিনিয়ে দেয়। এই ধরনের অপরিবর্তিত নকশা এটিকে এক কালজয়ী সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করেছে। প্রতি বছর মূর্তিটি ১৮ থেকে ২০ ফুট লম্বা হয়, যা মুম্বাইয়ের সবচেয়ে উঁচু গণেশ মূর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রেকর্ড-ভাঙা অনুদান
ভক্তরা সোনা, রুপার গয়না থেকে শুরু করে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান দেন। বছরের পর বছর ধরে, লালবাগচা রাজা সার্বজনীন গণেশ উৎসব মণ্ডপ কোটি কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে, যা এটিকে দেশের সবচেয়ে ধনী গণেশ মণ্ডপগুলোর একটি করে তুলেছে। এই সংগৃহীত অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সামাজিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
Ganesh Chaturthi : পার্থিব জগতে শ্রী গনেশের গজমস্তক রহস্য !
বিসর্জন যাত্রার মহিমা
লালবাগচা রাজার বিসর্জন যাত্রা এক দর্শনীয় ঘটনা। বিপুল সংখ্যক ভক্ত এই শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ায় মূর্তিটি গিরগাঁও চৌপাট্টিতে পৌঁছাতে ১৫-২০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বলিউড অভিনেতা, শিল্পপতি এবং রাজনীতিবিদ সহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও প্রতি বছর এই মণ্ডপে প্রার্থনা করতে আসেন, যা সত্যিই এটিকে মুম্বাইয়ের ‘রাজা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মূর্তি তৈরির কারিগর: এই মূর্তিটি বংশ পরম্পরায় কাম্বলে পরিবার দ্বারা তৈরি করা হয়। তাদের নিবেদিত প্রচেষ্টায় লালবাগচা রাজা প্রতি বছর তার আসল নকশা এবং জাঁকজমক বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
ঐক্যের প্রতীক: ধর্মীয় সীমার বাইরেও লালবাগচা রাজা মুম্বাইয়ের একতা, বিশ্বাস এবং সহনশীলতার এক সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে। উৎসবের সময় সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখানে একত্রিত হন, যা শহরের এই বিশেষ দিকটি তুলে ধরে।