ব্যুরো নিউজ ২২শে আগস্ট ২০২৫ : পথকুকুরদের বিষয়ে নিজেদের ১১ই আগস্টের আগের নির্দেশ পরিবর্তন করে সুপ্রিম কোর্ট আজ এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। বিচারপতি বিক্রম নাথের নেতৃত্বে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, যেসব পথকুকুরকে কর্তৃপক্ষ তুলে নেবে, তাদের নির্বীজকরণ, টিকাদান ও কৃমিনাশক দেওয়ার পর পুনরায় তাদের মূল এলাকায় ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে, জলাতঙ্ক আক্রান্ত বা আক্রমণাত্মক আচরণকারী কুকুরদের এই নির্দেশিকার বাইরে রাখা হয়েছে এবং তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে হবে।
আদালত সারা দেশে জনসমক্ষে পথকুকুরদের খাওয়ানো নিষিদ্ধ করেছে এবং সমস্ত পৌরসভা এলাকাগুলিতে নির্দিষ্ট ফিডিং জোন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার পরিধি দিল্লি-এনসিআর ছাড়িয়ে সমগ্র ভারতে প্রসারিত করা হয়েছে, এবং সমস্ত রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিকে এনিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল (ABC) নিয়মাবলী মেনে চলতে বলা হয়েছে।
রায়ের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দিক
আজকের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে দেওয়া হলো:
১. পরিবর্তিত মুক্তির আদেশ: কর্তৃপক্ষ দ্বারা ধরে আনা পথকুকুরদের নির্বীজকরণ, কৃমিনাশক ও টিকা দেওয়ার পর তাদের মূল স্থানে ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে, জলাতঙ্ক আক্রান্ত বা আগ্রাসী আচরণকারী কুকুরদের ছাড়া হবে না।
২. জনসমক্ষে খাওয়ানোয় নিষেধাজ্ঞা: দেশজুড়ে জনসমক্ষে এবং রাস্তায় পথকুকুরদের খাওয়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ফিডিং জোনগুলিতে খাওয়ানোর অনুমতি থাকবে।
৩. নির্দিষ্ট ফিডিং স্থান: পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ ফিডিং জোন তৈরি করতে হবে। সাইনবোর্ডের মাধ্যমে জনগণকে জানানো হবে যে, শুধুমাত্র এই নির্ধারিত স্থানগুলিতেই কুকুরদের খাবার দেওয়া যাবে।
৪. হেল্পলাইন: পথকুকুর সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা বা নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য পৌর সংস্থাগুলিকে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৫. অবরোধে নিষেধাজ্ঞা: কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন পথকুকুর ব্যবস্থাপনার কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের বাধা দিতে পারবে না। কোনো বাধা দিলে তা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. আবেদনকারীদের জন্য আমানত: পশুপ্রেমী ব্যক্তি ও এনজিও-দের যথাক্রমে ২৫,০০০ এবং ২ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। এই অর্থ পথকুকুরদের জন্য পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা উন্নত করতে ব্যবহৃত হবে।
৭. পথকুকুর দত্তক: নাগরিকরা পৌর সংস্থার কাছে আবেদন করে পথকুকুর দত্তক নিতে পারবেন। দত্তক নেওয়া কুকুরদের চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং তাদের পুনরায় রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
৮. নিয়ম পালনের হলফনামা: পৌর কর্তৃপক্ষগুলিকে এনিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল নিয়মাবলী পালনের বিষয়ে একটি হলফনামা জমা দিতে হবে, যেখানে কুকুর ধরার কর্মী, খাঁচা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের মতো উপলব্ধ সম্পদের বিবরণ থাকবে।
৯. সারা ভারত জুড়ে পরিধি: সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার পরিধি দিল্লি-এনসিআর থেকে বাড়িয়ে সমগ্র ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। জাতীয় নীতি প্রণয়নের জন্য হাইকোর্টগুলিতে বিচারাধীন একই ধরনের মামলাগুলি সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত করা হবে।
১০. কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদন: পৌর কর্তৃপক্ষগুলিকে পথকুকুর ধরা, আশ্রয় দেওয়া, নির্বীজকরণ এবং ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে নিয়মিত রেকর্ড রাখতে হবে এবং আদালতকে নিয়মিত অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে হবে।
মামলার প্রেক্ষাপট
এই মামলাটি শুরু হয়েছিল একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, যা দিল্লির রাস্তায় পথকুকুরদের দ্বারা বিশেষ করে শিশুদের জন্য সৃষ্ট বিপদ তুলে ধরেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ই আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ দিল্লি-এনসিআর থেকে অবিলম্বে পথকুকুরদের সরিয়ে নেওয়ার এবং তাদের আর রাস্তায় না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এই কঠোর রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ও আইনি চ্যালেঞ্জ উঠে আসে। এরপর ১৩ই আগস্ট এই মামলাটি একটি তিন বিচারপতির বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়, যা আজ আগের রায়টি সংশোধন করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করেছে।

















