ব্যুরো নিউজ ১৯শে আগস্ট ২০২৫ : প্রায় চার বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসানে বড় ধরনের কূটনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠকের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এই উদ্যোগকে ইউরোপীয় নেতারা স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে যুদ্ধের অবসানে একটি “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হোয়াইট হাউসে হাই-লেভেল বৈঠক
সোমবার হোয়াইট হাউসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাম্প ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বৈঠকে যোগ দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি, যা ইউক্রেনের শান্তি চুক্তির একটি প্রধান দাবি। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে “খুব ভালো সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
Donald Trump : ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির চেষ্টায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে জেলেনস্কির অনমনীয় অবস্থান ।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ
হোয়াইট হাউসের এই বৈঠকের পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেন। ৪০ মিনিটের এই ফোনালাপে দুই নেতা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার স্তর বাড়ানোর বিষয়ে একমত হন। ট্রাম্প নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে জানান, তিনি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের ব্যবস্থা করা শুরু করেছেন। এই বৈঠকের পর তিনি নিজেও তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যোগ দেবেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জও ট্রাম্পের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বলেন, পুতিন নীতিগতভাবে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছেন।
ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
এই কূটনৈতিক অগ্রগতিকে ইউরোপীয় নেতারা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এটিকে ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছেন। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে ট্রাম্পের নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রস্তাবকে “যুগান্তকারী” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভবিষ্যতে একটি চতুর্পক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে একজন ইউরোপীয় নেতাও উপস্থিত থাকবেন। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জ বলেছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলেই এখন আরও গুরুতর আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে, তিনি জোর দিয়েছেন যে, পরবর্তী কোনো বৈঠক শুরু হওয়ার আগে যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত জরুরি।
PM Modi : ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার আগে মোদীর দ্বারস্থ জেলেনস্কি, নরম হল ইউক্রেনের অবস্থান?
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠককে “এ যাবতকালের সেরা আলোচনা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ইউক্রেন ত্রিমুখী বৈঠকে যোগ দিতে প্রস্তুত, তবে এর তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জেলেনস্কি বলেন, “আমরা শান্তির পথে কখনও থামব না।” তিনি আরও স্পষ্ট করেন যে, রাশিয়া যদি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে, তবে তার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ত্রিমুখী বৈঠকের দিকে এগোনো যেতে পারে।
ওয়াশিংটনের এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইউরোপে একটি স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে, কারণ অনেক ইউরোপীয় নেতা আশঙ্কা করেছিলেন যে ট্রাম্প ইউক্রেনকে ছাড় দিতে চাপ দিতে পারেন। তবে এখন মনে হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের অবসান ঘটাবে।