ব্যুরো নিউজ ১৮ই আগস্ট ২০২৫ : বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই এবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা তিনজন (নির্বাচন) কমিশনার উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেব, কবে পশ্চিমবঙ্গ বা অন্যান্য রাজ্যে এসআইআর পরিচালনা করা হবে।”
এর আগে, বিহারে এসআইআর শুরু হওয়ার পর জনসাধারণের বিতর্কের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন বাংলার ২০০২ সালের এসআইআর-এর সংরক্ষণাগারভুক্ত তথ্য প্রকাশ করেছিল, যা ২৩টি জেলার মধ্যে ১১টিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছে। গত মাসে বীরভূমের একটি প্রশাসনিক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, এই প্রক্রিয়াটি বাংলায় এনআরসি (National Register of Citizens) আনার “পেছনের দরজা দিয়ে” একটি প্রচেষ্টা। তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পরেই কেবল নির্বাচন কমিশন সব দায়িত্ব নেয়। তার আগে পর্যন্ত প্রশাসন রাজ্য সরকারের হাতে থাকে। বিএলওরা রাজ্য সরকারের কর্মচারী, তারা কাউকে হেনস্থা করবেন না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় কোনো এসআইআর হতে দেবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
Bihar : ইন্ডি জোটের রাজনীতিতে বিভ্রান্ত জনসাধারণ ! ক্ষুব্ধ বিহারের মিনতা দেবী
বিহারের এসআইআর-এর পক্ষে কমিশনের অবস্থান:
পশ্চিমবঙ্গের এসআইআর-এর সময়সীমা নিয়ে নীরব থাকলেও, নির্বাচন কমিশন বিহারে চলমান এসআইআর প্রক্রিয়াকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করেছে। জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “যদি নির্বাচন সংক্রান্ত পিটিশনগুলি ৪৫ দিনের মধ্যে জমা না দিয়ে প্রকাশ্যে ‘ভোট চোরি’র অভিযোগ তোলা হয়, তবে তা ভারতের সংবিধানের প্রতি অপমান।” তিনি ভোট কারচুপি, দ্বৈত ভোটিং এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগগুলিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সিইসি ( CEC ) আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত ১.৬ লক্ষ বুথ লেভেল এজেন্ট এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন, এবং খসড়া ভোটার তালিকা দলীয় প্রতিনিধিদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ও যাচাই করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৮,০০০-এরও বেশি দাবি ও আপত্তি জমা পড়েছে।
বিদেশী বা অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ:
বিহারের ভোটার তালিকায় নেপালি বা বাংলাদেশিদের নাম থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “আমি এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র ভারতের নাগরিকরাই বিধায়ক ও সংসদ নির্বাচন করতে পারেন। অন্যদের সেই অধিকার নেই। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য যাচাই হবে। যারা ভারতের নাগরিক নয়, তারা ভোট দিতে পারবে না।”
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ:
কমিশনের এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা আগেই রাহুল গান্ধী বিহারের সাসারাম থেকে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেন। তিনি এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচনী গণতন্ত্র রক্ষার একটি গণ-আন্দোলন বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “এখন গোটা দেশ জানে যে, নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচন চুরি করছে। আমরা তাদের এই কাজ করতে দেব না।”