ব্যুরো নিউজ ১৪ আগস্ট ২০২৫ : আজ আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক এবং এই দেশের স্বাধীনতা দিবস পালন করি, কিন্তু এই বর্তমান সহজে প্রাপ্ত হয়নি। অগুনতি প্রাণের বলিদান এবং অধরা স্বপ্নের সমাপ্তির একটি ইতিহাস জুড়ে রয়েছে এই স্বাধীনতার প্রাপ্তিতে। ফিরে দেখা যাক সেই ২০০ বছরের ইতিহাস, কীভাবে ভারত হয়েছিল পরাধীন এবং রাজা প্রজা নির্বিশেষে চালিয়ে গিয়েছিল নানাবিধ সংগ্রাম, যা করেছিল গোটা ভারতবর্ষকে ক্রমে ক্রমে স্বাধীন!
ব্রিটিশ বাণিজ্যিক সংস্থার উত্থান ও ভারত সম্রাটদের পতন
১৬১২: সুরাটে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতি নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্য ঘাঁটি স্থাপন করা হয়।
১৭৫৭: পলাশীর যুদ্ধ: রবার্ট ক্লাইভের অধীনে ব্রিটিশ বাহিনী নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে, যা বাংলায় ব্রিটিশ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সূচনা করে।
১৭৬৪: বক্সারের যুদ্ধ: ব্রিটিশরা মুঘল সম্রাট শাহ আলম II, অযোধ্যার নবাব এবং বাংলার নবাবের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যের উপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
১৭৭৩: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়, যা ভারতে ব্রিটিশ অঞ্চলের উপর বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
১৭৭৫-১৭৮২: প্রথম অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধ। ব্রিটিশ কোম্পানি ও মারাঠা সাম্রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যুদ্ধ বিরতি প্রার্থনা করে।
১৭৮৪: পিট’স ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাস হয়, যা ব্রিটিশ সরকার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা ব্রিটিশ-অধিকৃত ভারতীয় অঞ্চলগুলির দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
১৮০৩-১৮০৫: দ্বিতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধ। মারাঠা সাম্রাজ্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশরা এই যুদ্ধ শুরু করে এবং জয়লাভ করে। এর ফলে মারাঠা সাম্রাজ্যের ব্যাপক পতন ঘটে।
১৮১৭-১৮১৮: তৃতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশরা মারাঠাদের পুরোপুরি পরাজিত করে এবং ভারতের প্রধান সাম্রাজ্য পুরোপুরি দখল করে নেয়।
১৮৪৫-১৮৪৬: প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধ। রণজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর পর শিখ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশরা পাঞ্জাব দখল করার জন্য এই যুদ্ধ শুরু করে। এতে শিখরা পরাজিত হয়।
১৮৪৮: তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ‘Doctrine of Lapse’ ঘোষণা করেন, যার অধীনে কোনো ভারতীয় রাজা বা রানী বৈধ উত্তরাধিকারী ছাড়া মারা গেলে তাদের রাজ্য ব্রিটিশদের অধীনে চলে যাবে।
১৮৪৮-১৮৪৯: দ্বিতীয় অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশরা শিখদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে এবং পাঞ্জাবকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
১৮৫৭: প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ – সিপাহী বিদ্রোহ (স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ) শুরু হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ অভ্যুত্থান ছিল। এনফিল্ড বন্দুকের গরুর ও শূকরের চামড়ার কার্তুজ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির সৈনিক মঙ্গল পান্ডে বিদ্রোহ শুরু করেন। এই বিদ্রোহে মারাঠা থেকে মুঘল পর্যন্ত সমস্ত ভারতীয় শাসকরা যোগ দেন, যারা Doctrine of Lapse-এর শিকার হয়েছিলেন। উত্তর ভারত জুড়ে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ভারতীয় বাহিনীকে পরাজিত করে, কারণ ভারতীয়দের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, প্রযুক্তির দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ছিল। ভারতের শেষ স্বাধীন শাসক নানা সাহেব পেশওয়া নেপালে পালিয়ে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়া এড়ান এবং শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয়, তার উপাধি ব্রিটিশরা কেড়ে নেয়। এরপর ব্রিটিশরা দিল্লি দখল করে।
এই ঘটনা ভারতীয় সাম্রাজ্যগুলির সমাপ্তি ঘটায় এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর পরপরই ব্রিটিশ রাজত্ব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে প্রশাসন অধিগ্রহণ করে। যদিও এই ঘটনাকে বেশিরভাগ সময়ই ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা সুসংহত করার ঘটনা হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু এটি ভারতে রাজতন্ত্রের ধারণার অবসান ঘটায়। এরপর থেকে ভারতীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসাহিত হয়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বনাম ভারতের জনগণ
১৮৫৮: ভারত সরকার আইন (Government of India Act)। এই আইন বলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত সরাসরি ব্রিটিশ রাজের অধীনে চলে আসে। একজন ভাইসরয় নিযুক্ত হন।
১৮৭৬: ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট—স্থানীয় ভারতীয় প্রকাশক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ব্রিটিশরা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দমন করার জন্য এই আইনটি ঘোষণা করে। এটি ছিল ভারতীয় জনগণের কণ্ঠস্বর দমনের প্রথম সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টা।
১৮৮৫: অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম নামক একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্টের উদ্যোগে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (Indian National Congress) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় জনতার দাবি তুলে ধরা এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রশাসনের মধ্যে মধ্যস্থতা (mediate) করা।
১৯০২: সতীশ চন্দ্র বসু এবং ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র দ্বারা কলকাতায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য অনুশীলন সমিতি নামে একটি গোপন সংগঠন গঠিত হয়। এই সংস্থা তাদের প্রকাশনা ‘যুগান্তর’-এর মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে শুরু করে।
১৯০৪: ভি. ডি. সাভারকর কর্তৃক নাসিকে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য গণ-অসন্তোষ একত্রিত করতে অভিনব ভারত নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের একটি শাখা লন্ডনে ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সোসাইটি‘ নামে স্থাপিত হয়।
১৯০৫: বঙ্গভঙ্গ। ব্রিটিশ সরকার বাংলা প্রদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করার ঘোষণা দেয়, যা ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
১৯০৬: মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯০৭: সুরাট বিভাজন (Surat Split)। কংগ্রেস চরমপন্থী এবং নরমপন্থী দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়।
১৯০৮: ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী একজন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করার চেষ্টা করেন অনুশীলন সমিতির তরফে। ক্ষুদিরাম বসু আত্মসমর্পণ করেন এবং ব্রিটিশদের হাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন, প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন। ঋষি অরবিন্দ এই কাণ্ডে জড়িয়ে থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন ।
১৯০৯: মিন্টো-মর্লে সংস্কার (Morley-Minto Reforms)। এই সংস্কার মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ব্যবস্থা করে, যা বিভেদ ও বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দেয়। মদন লাল ধিংরা লন্ডনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল উইলিয়াম কার্জন-উইলিকে হত্যা করেন। নাসিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ. এম. টি. জ্যাকসনকে অনন্ত লক্ষ্মণ কানহেরে হত্যা করেন।
১৯১০: এ. এম. টি. জ্যাকসন হত্যার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে বীর সাভারকর ধরা পড়েন এবং তাকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ডঃ কে. বি. হেগডেওয়ার কলকাতায় অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য হন।
১৯১১: বঙ্গভঙ্গ বাতিল হয়।
১৯১৫: মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন।
১৯১৬: বাল গঙ্গাধর তিলকের দ্বারা হোমরুল আন্দোলন শুরু হয়। লখনউ চুক্তি (Lucknow Pact)। কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে একটি অস্থায়ী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১৯: রাওলাট আইন (Rowlatt Act)। এই দমনমূলক আইনের বিরুদ্ধে গান্ধী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড: অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালায়।
১৯২০-২২: কংগ্রেসের দ্বারা অসহযোগ আন্দোলন। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার প্রতিবাদে এবং খিলাফত আন্দোলনের সমর্থনে গান্ধী এই আন্দোলন শুরু করেন।
১৯২৩: মতিলাল নেহেরু স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করেন। অনুশীলন সমিতি হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন-এ রূপান্তরিত হয়।
১৯২৫: ডঃ কে. বি. হেগডেওয়ার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ গঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একতাবদ্ধ শক্তি হিসেবে হিন্দুত্বকে গড়ে তোলা।
১৯২৮: হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন রূপান্তরিত হয়ে HSRA নামে একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী সংগঠন হয়। ভগত সিং এবং রাজগুরু পুলিশ অফিসার জন সন্ডার্সকে গুলি করে লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন।
১৯২৯: ভগত সিং দিল্লির সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে বোমা নিক্ষেপ করেন, গ্রেপ্তার হন এবং দোষী সাব্যস্ত হন।
১৯৩০: আইন অমান্য আন্দোলন (Civil Disobedience Movement)। ব্রিটিশ লবণ আইনের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী বিখ্যাত লবণ সত্যাগ্রহ বা ডান্ডি মার্চ শুরু করেন।
১৯৩১: ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং রাজগুরুর ফাঁসি হয়।
১৯৩৫: ভারত সরকার আইন (Government of India Act) গঠিত হয়।
১৯৩৯: নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।
১৯৪০: সর্দার উধাম সিং লন্ডনে এল. জি. ডায়ারকে হত্যা করে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেন।
নেতাজিকে বীর সাভারকর পরামর্শ দেন অক্ষশক্তির দ্বারা বন্দী ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের একত্রিত করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। লর্ড লিনলিথগো কর্তৃক আগস্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়।
১৯৪১: নেতাজি সুভাষ বসু নাৎসি জার্মানিতে পৌঁছান এবং ফ্রি ইন্ডিয়া লিজিয়ন গঠন করেন।
১৯৪২: ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের ভারত থেকে অবিলম্বে চলে যাওয়ার জন্য এই ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলন দমন করা হয়।
নেতাজি জাপানে আজাদ হিন্দ ফৌজ (Indian National Army) গঠন করেন।
১৯৪৩: নেতাজি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির অংশ হিসেবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ করেন এবং সিঙ্গাপুর, আন্দামান এবং বার্মায় অস্থায়ী ভারত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৫: সিমলা কনফারেন্সে ওয়াভেল প্ল্যান ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়, এবং নেতাজি জাপানে যাওয়ার পথে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন বলে মনে করা হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে বন্দী হয়।
১৯৪৬: দ্বিতীয় ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ – আজাদ হিন্দ ফৌজের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহের জন্ম হয়। রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি-এর বিদ্রোহ শুরু হয় এবং দ্রুত সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ কমান্ডারদের বন্ধক বানানো হয়। ব্রিটিশরা ১৮৫৭ সালের পুনরাবৃত্তির ভয় পায়। কংগ্রেস সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। ব্রিটিশরা আইএনএ-এর যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয় এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি ক্যাবিনেট মিশন পাঠায়।
১৯৪৭: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় ভারত ভাগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিভাজন পরিকল্পনা গ্রহণের পর ভারতীয় স্বাধীনতা আইন (Indian Independence Act) তৈরি হয়।
১৫ আগস্ট ১৯৪৭: ভারত ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
India Independence Day : ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন: ইতিহাস , বর্তমান ও আগামীর তাৎপর্য
ব্রিটিশরা কেন ভারতে এসেছিল?
ব্রিটিশরা ১৬০৮ সালে সুরাট বন্দরে এসেছিল, মূলত বণিক হিসেবে লাভজনক মসলার ব্যবসা থেকে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যা ১৬০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এই উদ্যোগের অগ্রভাগে ছিল। ভারত তার সমৃদ্ধ সম্পদ এবং প্রাণবন্ত বাজারের কারণে ইউরোপীয় বণিকদের জন্য একটি অনিবার্য সুযোগ উপস্থাপন করেছিল।
বণিক থেকে শাসক হিসেবে ব্রিটিশদের রূপান্তরে বেশ কয়েকটি কারণ অবদান রেখেছিল:
- অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য: কোম্পানির লাভ বাড়ার সাথে সাথে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বাড়ে। প্রতিযোগিতা দূর করা, কাঁচামাল সুরক্ষিত করা এবং বাজার সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষা একটি আরও আক্রমণাত্মক অবস্থানের দিকে নিয়ে যায়।
- রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা: পর্তুগিজ, ডাচ এবং ফরাসি সহ ইউরোপীয় শক্তিগুলি ভারতীয় বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। ব্রিটিশরা কৌশলগত জোট এবং সামরিক শক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
- ভারতীয় বিভাজনগুলির শোষণ: ভারতীয় সাম্রাজ্যগুলি দুর্বল হয়ে পড়ছিল, এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াই ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ করার এবং তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ তৈরি করে।
- সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক কৌশল ছিল, যা ভারতীয় শাসকদের সাথে সংঘাতে তাদের উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে মোড় ঘুরে যায়, যেখানে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশরা বাংলার নবাবকে পরাজিত করে। এই বিজয় ভারতে ব্রিটিশদের আঞ্চলিক বিস্তারের সূচনা করে। কোম্পানি ধীরে ধীরে তাদের ক্ষমতা সুসংহত করে, ভারতীয় দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগিয়ে এবং কূটনীতি, বলপ্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক চাপের সমন্বয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। ১৯ শতকের মধ্যে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি শক্তিশালী সত্তায় পরিণত হয়, কার্যত ভারতের বিশাল অংশ শাসন করতে থাকে। তবে, ভারতীয় জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ শেষ পর্যন্ত ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের দিকে নিয়ে যায়। এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে ভারতের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিতে বাধ্য করে, কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং ব্রিটিশ রাজের যুগের সূচনা করে।
উপসংহার
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভয়াবহ নৃশংসতা সত্ত্বেও ভারতীয় জনগণ নিজেদের সভ্যতার ঐতিহ্য ও নৈতিকতার উপর দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে উৎখাত করে। এইভাবে, ভারতীয়রা ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পতনে উভয় ক্ষেত্রেই সহায়ক ছিল।
লাখে লাখে সাধারণ ভারতবাসীর বলিদান এবং চরম স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হার না মানা এই আত্ম সমর্পণের গাথা , আগামী দিনে এই মাতৃভূমিকে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।

















