ব্যুরো নিউজ ১১ আগস্ট ২০২৫ : অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় একটি নতুন ও বিস্তৃত সামরিক অভিযানের পক্ষে সওয়াল করেছেন। রবিবার তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ইসরায়েলের “কাজ শেষ করা এবং হামাসকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।”
গত সপ্তাহে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সেনাবাহিনীকে শুধু গাজা শহরে নয়, “সেন্ট্রাল ক্যাম্প” এবং মুওয়াসি এলাকাতেও হামাসের শক্ত ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। এপি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েল এই দুটি অঞ্চলেই সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে।
জাতিসংঘের মতে, এই ক্যাম্পগুলিতে বর্তমানে পাঁচ লক্ষেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। নেতানিয়াহু “নিরাপদ অঞ্চল” থাকবে বলে দাবি করলেও, অতীতে এমন অঞ্চলগুলিতেও হামলা হয়েছে, ওই স্থানে হামাস যোদ্ধারা আশ্রয় নেওয়ার জন্যে।
আইডিএফ হামলায় সাংবাদিক হত্যা নিয়ে বিতর্ক
রবিবার গাজা শহরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) তীব্র বোমাবর্ষণে আল জাজিরার চার সাংবাদিক নিহত হন। শিফা হাসপাতালের প্রশাসনিক পরিচালকের মতে, হাসপাতালের বাইরে আল জাজিরার সাংবাদিকদের জন্য থাকা একটি তাঁবুতে হামলা চালানো হয়েছিল।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, হামলায় নিহত আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল শরিফ আসলে একজন হামাস সদস্য ছিলেন, যিনি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে কাজ করছিলেন।
গাজার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয় যে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে গাজার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। হামাসকে পরাজিত করা এবং “যুদ্ধ শেষ করার” এই পরিকল্পনা সবাই মেনে নিয়েছে।
তবে জাতিসংঘ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে যে, গাজার পূর্ণ সামরিক দখল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এবং এখনো গাজায় হামাস দ্বারা বন্দি রাখা ইসরায়েলি বন্ধকদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
আল-জাজিরা সাংবাদিক হত্যায় ইসরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার
আল-জাজিরা ইসরায়েলের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা একে “গাজা দখলের আগে কণ্ঠস্বরকে নীরব করার মরিয়া চেষ্টা” বলে অভিহিত করেছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ) বলেছে, ইসরায়েল নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে।
হামাস-পরিচালিত গাজা মিডিয়া অফিসের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। CPJ-এর মতে এই সংখ্যাটি ১৮৬।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সোমবার ঘোষণা করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়া একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এই সিদ্ধান্তটি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে চূড়ান্ত করা হবে। এই পদক্ষেপ ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং কানাডার মতো দেশগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যারা সম্প্রতি একই ধরনের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে।
আলবানিজ জানান যে, এই স্বীকৃতির জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু নির্দিষ্ট আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে হামাসকে কোনো ফিলিস্তিনি সরকারে না রাখা, গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই ঘোষণার পর ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত আমির মাইমন এটিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন।