WB DA SCI

ব্যুরো নিউজ ৪ আগস্ট ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলার শুনানি সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হলেও তা পিছিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এবার থেকে এই মামলার প্রয়োজনে রোজ শুনানি হবে। ফলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন রাজ্যের অজস্র সরকারি কর্মী।

মামলার প্রেক্ষাপট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

রাজ্যের সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবিতে বিভিন্ন সরকারি কর্মী সংগঠন আদালতের দ্বারস্থ হয়। গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশের পর রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে বকেয়া মেটানোর জন্য ৬ মাস সময় চেয়েছিল। একইসঙ্গে রাজ্য জানিয়েছিল, বকেয়া ডিএ কর্মীদের দেওয়ার বদলে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কোর্টের কাছে জমা রাখবে। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার শামিল হওয়ায় একাধিক সরকারি কর্মী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা করে। সেই সমস্ত কিছু নিয়েই সোমবার শীর্ষ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

PM Modi : বাংলার সিন্ডিকেট রাজে শিল্প নেই, অসুরক্ষিত নারী এবং কর্মসংস্থান : বক্তব্য রাখলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী

রাজ্য সরকারের যুক্তি ও আর্থিক সংকটের দাবি

রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, লক্ষ লক্ষ কর্মচারীকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে এমন কোনও বরাদ্দ নেই। রাজ্যকে যদি এই অর্থ দিতে হয়, তা হলে ঋণ নিতে হবে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি দরকার, এবং এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।
রাজ্যের আরও যুক্তি ছিল যে, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি একটি ঐচ্ছিক বিষয় এবং কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য নয়। পাশাপাশি, রাজ্য অভিযোগ করে যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে, যা রাজ্যের উপর আরও আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই কারণে কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান। দুই ধরনের কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক এখনও ৩৭ শতাংশ। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। সিঙ্ঘভি দাবি করেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে।

Suvendu Adhikari : ‘ভাইপো গ্যাং’ টাকা তোলে, মুসলিম লিগের সরকার চলছে রাজ্যে – বিরোধী দলনেতার প্রকাশ্য তথ্য !

আদালতের অবস্থান এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রশ্ন

গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদন উড়িয়ে জানিয়েছিল যে, তারা চাইলে এখনই রাজ্য সরকারের মামলা খারিজ করে দিতে পারে, কিন্তু তারা তা করছে না। অগাস্ট মাসে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। এবার আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে ডিএ মামলার বিস্তারিত শুনানি হবে এবং প্রয়োজনে রোজ শুনানি চলবে। রাজ্যের তরফে আগামী সোমবার শুনানির অনুরোধ করা হলেও বিচারপতি সঞ্জয় করোল তা খারিজ করে দেন।
এদিকে, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ দিতে গেলে ‘কোমড় ভেঙে যাবে’ বললেও দুর্গাপূজার অনুদান ক্লাবগুলির ক্ষেত্রে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে সরকারের কোষাগারে কোথা থেকে টাকা আসছে এবং ডিএ দেওয়ার বেলায় কেন এত অনীহা? সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের উপরই সম্পূর্ণ ভরসা রাখছে।
এবার সুপ্রিম কোর্টের সেই চূড়ান্ত রায়ের দিকেই তাকিয়ে অজস্র রাজ্য সরকারি কর্মী। আদৌ রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন কি না, পেলেও বকেয়ার কতখানি পাবেন এবং কবে থেকে তা অ্যাকাউন্টে ঢুকবে – সবটাই এবার স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর