ব্যুরো নিউজ ১ আগস্ট ২০২৫ : সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারতের অর্থনীতিকে “মৃত” বলে ঘোষণা করলেন এবং ২৫% শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন, তখন গোটা বিশ্ব হতবাক। কিন্তু এই মন্তব্যে সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হলেন যিনি, তিনি হলেন আমাদেরই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! রাহুল গান্ধী ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সম্পূর্ণ সমর্থন করে বললেন, “উনি ঠিকই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আর অর্থমন্ত্রী ছাড়া সবাই জানে ভারতের অর্থনীতি মরে গেছে।” যেন ট্রাম্প সাহেব এক কঠিন সত্যের পর্দা উন্মোচন করেছেন আর রাহুল গান্ধী সেই সত্যের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন।
মৃত অর্থনীতি বনাম জীবিত অর্থনীতি: কে জানে আসল খবর?
রাহুল গান্ধীর মতে, ভারতের অর্থনীতি নাকি এতোটাই মৃত যে স্বয়ং শ্মশান যাত্রার আয়োজন করা দরকার। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে গর্বের সঙ্গে বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি সত্য বলেছেন জেনে আমি আনন্দিত।” প্রশ্ন জাগে, যখন দেশের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এই ‘সত্য’ থেকে বেখবর, তখন কি আমরা ধরে নেবো যে আমরা ভিনগ্রহ তে বসবাস করছি , নাকি উনারা ইচ্ছাকৃতভাবে ডেড ইকোনমি সিন্ড্রোম অস্বীকার করছেন? রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, “গোটা বিশ্ব জানে যে ভারতীয় অর্থনীতি একটি মৃত অর্থনীতি।” এতে মনে হয়, গোটা বিশ্ব বুঝি ভারতের অর্থনীতির শ্রাদ্ধের তারিখ ঘোষণা করার অপেক্ষায় ছিল!
আদানি-রহস্য ও পররাষ্ট্র নীতির ময়নাতদন্ত
রাহুল গান্ধী থেমে থাকেননি। তিনি সরাসরি বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তারা নাকি গৌতম আদানির সুবিধার জন্য ভারতের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে। তাঁর মতে, আমাদের ‘প্রতিভাবান’ পররাষ্ট্র নীতি এমনই যে একদিকে আমেরিকা গালি দিচ্ছে, অন্যদিকে চীন তাড়া করছে, আর তৃতীয়ত, যখন সারা বিশ্বে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, তখন নাকি কোনো দেশ পাকিস্তানকে নিন্দা করে না। রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যে মনে হয়, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বুঝি সলিল সমাধি ঘটেছে।
তিনি আরও দাবি করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তি হবে এবং ট্রাম্প সেটি নির্ধারণ করবেন, আর প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্প যা বলবেন তাই করবেন। অর্থাৎ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাঠপুতুল , এবং দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, ও পররাষ্ট্র নীতি সবই নাকি ধ্বংসের মুখে। রাহুল গান্ধীর এই বিশ্লেষণে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক সুগভীর কমেডি সিনেমার প্লট তৈরি হয়ে যায়।
ট্রাম্পের রহস্যময় দাবি: মোদীর নীরবতা কেন?
রাহুল গান্ধী আরও প্রশ্ন তুলেছেন যে, ট্রাম্প যখন ৩০-৩২ বার যুদ্ধবিরতির দাবি করছেন, বলছেন ৫টি ভারতীয় জেট বিমান পড়েছে, ২৫% শুল্ক আরোপ করবেন, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন উত্তর দিতে পারছেন না? “কেন মোদীজি উত্তর দিতে পারছেন না? আসল কারণ কী? কার হাতে তার নিয়ন্ত্রণ?” – রাহুলের এই প্রশ্নগুলি এতটাই কৌতূহলোদ্দীপক যে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী বুঝি কোনো অদৃশ্য শক্তির ফাঁদে পড়েছেন, এবং তার রিমোট কন্ট্রোল হয়তো অন্য কারো হাতে।
শশী থারুরের বিপরীত সুর: জীবিত না মৃত, কোনটা আসল?
তবে এই ‘মৃত অর্থনীতি’ বিতর্কে অন্য সুর শোনা গেছে কংগ্রেসেরই আরেক সাংসদ শশী থারুরের কণ্ঠে। তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “এটা সত্য নয় এবং আমরা সবাই তা জানি।” থারুরের এই মন্তব্যে বোঝা যায়, কংগ্রেসের ভিতরেই এই ‘মৃতদেহ’ নিয়ে এক প্রকার মতবিরোধ আছে। রাহুল গান্ধী যেখানে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতকে মৃত ঘোষণা করছেন, থারুর সেখানে লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এখন প্রশ্ন হলো, ভারতের অর্থনীতি কি রাহুল গান্ধীর চোখে মৃত, নাকি থারুরের চোখে জীবিত? নাকি দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন লাশের দিকে তাকিয়ে আছেন?
বিজেপির প্রতিক্রিয়া: রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক শবযাত্রা?
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যে বিজেপি স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেছেন যে, রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য দেশের জন্য অপমানজনক এবং তিনি “নতুন সর্বনিম্ন পর্যায়ে” পৌঁছেছেন। মালব্য ব্যাঙ্গ করে বলেছেন, “তবে সত্যি বলতে – এখানে একমাত্র ‘মৃত’ জিনিসটি হলো রাহুল গান্ধীর নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং উত্তরাধিকার।” তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, “রাহুল গান্ধী আসলে কার জন্য কথা বলছেন? কেন তিনি বিদেশী প্রচার পুনরাবৃত্তি করেন যা ভারতকে দুর্বল করে?”
উপসংহার
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কে মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাঠপুতুল! রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা সে নিজেই করছে, এমনকি তার দলের বর্ষীয়ান নেতাও করছে। প্রশ্ন উঠছে, যদি প্রধানমন্ত্রী মোদী, প্রধান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর মতে , মার্কিন রাষ্ট্রপতির ইশারায় ওঠাবসা করেন, তাহলে অর্থনীতিতে এতটা ভিন্ন মত হয় কীভাবে যে মার্কিন নীতিতে ‘মৃত’ ঘোষিত হয়? কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতার রিমোট কন্ট্রোল এখন কার হাতে ? সেইটাই এই মুহূর্তের সব থেকে বড় প্রশ্ন !