malegaon blast case NIA court

ব্যুরো নিউজ ৩১ জুলাই ২০২৫ : মুম্বাইয়ের বিশেষ এনআইএ আদালত ২০০৮ সালের মালগাঁও বিস্ফোরণ মামলার রায় আজ (৩১শে জুলাই) ঘোষণা করেছে, যা প্রায় ১৭ বছর ধরে চলে আসা একটি চাঞ্চল্যকর মামলার অবসান ঘটাল। ২০০৮ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মুম্বাই থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীল শহর মালগাঁওয়ের একটি মসজিদের কাছে একটি মোটরসাইকেলে বাঁধা বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়। এই বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন, যা অঞ্চলটিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং দীর্ঘ বছর ধরে তদন্ত ও আইনি লড়াই চলে। এনআইএ উল্লেখ করেছিল যে বিস্ফোরণটি রমজান মাসের পবিত্র সময়ে, নবরাত্রি উৎসবের ঠিক আগে ঘটেছিল, এবং অভিযুক্তদের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।

NIA-এর তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA), যারা এই মামলার তদন্ত পরিচালনা করেছিল, তারা অভিযুক্তদের “আনুপাতিক শাস্তি” দাবি করেছিল। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই বিচার প্রক্রিয়া চলতি বছরের ১৯শে এপ্রিল শেষ হয় এবং রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। মহারাষ্ট্র অ্যান্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড (ATS) প্রাথমিকভাবে এই মামলার তদন্ত করেছিল, পরে ২০১১ সালে এটি NIA-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে UAPA-এর ১৬ (সন্ত্রাসবাদী কাজ করা) এবং ১৮ (সন্ত্রাসবাদী কাজ করার ষড়যন্ত্র) ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০(খ) (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩০২ (হত্যা), ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), ৩২৪ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা) এবং ১৫৩(ক) (দুই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার) সহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিচার চলাকালীন প্রসিকিউশন ৩২৩ জন সাক্ষী পেশ করেছিল, যার মধ্যে ৩৭ জন তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করেন।

PM Modi : দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ছাড়াই , জনসমর্থনে ছাড়াল ইন্দিরা গান্ধীর শাসন মেয়াদের রেকর্ড ! নরেন্দ্র মোদি এখন ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন প্রধানমন্ত্রী

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল

২০০৮ সালের মালগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত সাত জন হলেন:

  • বিজেপি নেত্রী এবং প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর
  • লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত
  • মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রমেশ উপাধ্যায়
  • অজয় রাহিরকার
  • সুধাকর দ্বিবেদী
  • সুধাকর চতুর্বেদী
  • সমীর কুলকার্নি

 

আদালতের ঐতিহাসিক রায়: সকল অভিযুক্ত বেকসুর খালাস

বৃহস্পতিবার (৩১শে জুলাই) মুম্বাইয়ের একটি বিশেষ NIA আদালত ২০০৮ সালের মালগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত সহ সকল সাত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। রায় ঘোষণার সময় বিশেষ বিচারক এ কে লাহুতি বলেন:

  • প্রসিকিউশন বোমাটি মোটরসাইকেলে রাখা হয়েছিল তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • বিস্ফোরক ডিভাইসটি অন্য কোথাও রাখা হয়ে থাকতে পারে।
  • আরডিএক্স কাশ্মীর থেকে আনা হয়েছিল এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
  • তদন্তে মোটরসাইকেলটি কে বা কীভাবে সেখানে রেখেছিল তা নির্ধারণ করা যায়নি।
  • বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাথর জব্দ করা হয়নি, সম্ভবত ঘটনার পর বিশৃঙ্খলার কারণে।
  • ঘটনাস্থল থেকে আঙুলের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
  • সংগৃহীত প্রমাণ প্রভাবিত বা দূষিত হতে পারে।
  • মোটরসাইকেলের চেসিসটি অক্ষত থাকলেও, তদন্তের জন্য এটি সঠিকভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়নি।
  • যদিও সাধ্বী প্রজ্ঞা মোটরসাইকেলের নিবন্ধিত মালিক, তবে বিস্ফোরণের সময় এটি তাঁর দখলে ছিল এমন কোনো প্রমাণ নেই।
  • প্রসিকিউশন কোনো ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক হয়েছিল তাও প্রমাণ করতে পারেনি।
  • এই মামলায় UAPA প্রয়োগের অনুমোদন ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
  • সাক্ষীদের বক্তব্য অসংগতিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট ছিল।
  • কর্নেল পুরোহিত বোমা তৈরি করেছেন বা সাধ্বী প্রজ্ঞার বাইক মালগাঁও বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
  • অপর্যাপ্ত এবং অবিশ্বস্ত প্রমাণের কারণে সকল অভিযুক্তকে সন্দেহের সুবিধা দিয়ে খালাস করা হয়েছে।

 

ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

আদালত মহারাষ্ট্র সরকারকে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

 

রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্ক

রায় ঘোষণার পর সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছেন, যারা দোষী, ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন। তিনি আরও বলেন, কিছু লোক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ‘ভাগওয়া’ (গেরুয়া) কে বদনাম করার চেষ্টা করেছিল। তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে আমার জীবন নষ্ট হয়েছে এবং যারা ‘ভাগওয়া’ কে অপমান করার চেষ্টা করেছে, ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন।”
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী সাধ্বী প্রজ্ঞাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে আজ তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
মামলার একজন অভিযুক্ত সমীর কুলকার্নি, রায় ঘোষণার আগে সাংবাদিকদের বলেন যে, কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী, এনসিপি(এসপি) প্রধান শরদ পাওয়ার এবং অন্যান্যরা ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য “গেরুয়া পতাকা” এবং হিন্দু পরিচয়কে “বদনাম” করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কুলকার্নি দাবি করেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং দেশপ্রেমিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। তিনি UPA সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু সাধু-সন্ন্যাসী ও ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার অভিযোগ তোলেন এবং বলেন, এই মামলায় মূল এফআইআর, হলফনামা এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিখোঁজ রয়েছে।

PM Modi : এক সময়ে আতঙ্কের লাল পথে সমৃদ্ধির সবুজ সঙ্কেত , দেশের সুরক্ষা এবং বিকাশে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর ।

‘হিন্দু উগ্রপন্থা’র মিথ্যাচার ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি

কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন UPA সরকারের আমলে, এই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে এক অদ্ভুত রাজনীতির সূচনা দেখা যায়। UPA-এর প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মনমোহন সিং বলেছিলেন যে “মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রথম অধিকার আছে এই দেশের প্রধানের আসনে”, যা বিতর্কিত এবং শেষমেশ UPA-এর পতন ডেকে আনে। এছাড়াও UPA আমলে, সৃষ্টি করা হয় ‘হিন্দু উগ্রপন্থা’র মিথ্যা মামলা এবং অভিযোগের দ্বারা! মালগাঁও বিস্ফোরণ মামলা এমনই এক ঘটনা যেখানে শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাধু-সন্তদের নয়, এমনকি ভারতীয় সেনার অধিকারিকদেরও উগ্রপন্থী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অথচ ঠিক এই কংগ্রেসের UPA শাসনকালে ঘটে গিয়েছিল একের পর এক ভয়ংকর ইসলামিক মৌলবাদী হামলা—যেমন মুম্বাইয়ের ২৬/১১, পার্লামেন্টে হামলা, অক্ষরধাম মন্দিরে হামলা এবং আরও অনেক কাণ্ড। সে ক্ষেত্রে UPA সরকারের কোনো রকমের ইতিবাচক তদন্ত বা পদক্ষেপ দেখা যায়নি, পরিবর্তে ‘আমান কি আশা’ ধরনের কিছু নাটকীয় প্রয়াসে চেষ্টা ছিল শত্রু রাষ্ট্রদের সাথে ভারতের মিত্রতা বাড়ানোর। আজ আদালতে সেই “হিন্দু উগ্রপন্থার” মিথ্যাচারকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হলো। এতে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী জনমানুষে যেমন স্বস্তি এসেছে, তেমনি তোষণবাদী এবং বাম রাজনীতি মনস্ক ব্যক্তিদের মধ্যে হতাশা জেগে উঠেছে। দেশের রাজনীতি এক অদ্ভুত স্থানে অবস্থান করছে—হয় সনাতনী দেশভক্ত আর নয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশদ্রোহী। সার্বিক মেলবন্ধনে ভারতের উন্নতি আর রাজনীতির মূল আদর্শ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর