ব্যুরো নিউজ ২১ জুলাই ২০২৫ : আজ, সোমবার ২১শে জুলাই, তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী শহিদ দিবসের পাল্টা হিসেবে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক জনসংযোগ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শিলিগুড়িতে বিজেপি যুব মোর্চার ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ থেকে শুরু করে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’ – সব মিলিয়ে একুশে জুলাইকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপ চরমে পৌঁছেছে।
শুভেন্দুর কটাক্ষ: ‘ওটা সভা নয়, পাগলু ডান্স হবে’
এদিন সকালে উত্তরবঙ্গ রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের শহিদ দিবস নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “ওটা সভা নয়, ওখানে পাগলু ডান্স হবে।” তৃণমূল কর্মীদের ধর্মতলার উদ্দেশ্যে আসার পথে নাচানাচি করার একটি ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “নাচতে নাচতে আসছে দেখছেন না। জলঙ্গি থেকে বাসের ভেতরে নাচতে নাচতে আসছে বাজনা বাজিয়ে। পুরুলিয়া থেকে জোর করে যাদের আনা হয়েছে তারা ইতিমধ্যেই পালিয়েছে।” এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায়, ২১শে জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে ধর্মতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া জলঙ্গি দক্ষিণ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের কর্মীরা হিন্দি গানের তালে নাচতে নাচতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন, অনেকে আবার উচ্ছ্বাসের চোটে নিজের জামাও খুলে ফেলেছেন। শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়টিকে উদ্দেশ্য করেই কটাক্ষ করেছেন।
শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযান: কড়া নিরাপত্তা
ধর্মতলার পাশাপাশি এদিন সেজে উঠেছে শিলিগুড়িও। উত্তরকন্যার কাছে বিজেপির সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। উত্তরকন্যাকে পাশে রেখে যখন র্যালি এগোবে, তখন উত্তরকন্যার নিরাপত্তায় বিশেষ বন্দোবস্ত করবে পুলিশ। র্যালির যাত্রাপথ এবং সভামঞ্চ মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন বলে জানা গেছে।
দিলীপ ঘোষের ‘চমক’ ও ‘শেষ শহিদ দিবস’ ঘোষণা
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা যাবে কিনা, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। তাঁর দলবদল নিয়েও রাজ্য রাজনীতিতে কম আলোচনা হয়নি। তবে, ২১শে জুলাইয়ের সকালে একেবারে নিজের ইউনিক স্টাইলেই দেখা গেল দিলীপ ঘোষকে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সংবাদমাধ্যমের সামনে দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূল শহিদ হয়ে যাবে, এটাই শেষ শহিদ দিবস। ২০২৬ সালে শহিদ হয়ে যাবে তৃণমূল।”
তিনি একুশে জুলাইয়ে চমক দেওয়ার কথা বারংবার বলেছিলেন। সেইমতো এদিন ধর্মতলায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবসের’ পাল্টা হিসেবে মেদিনীপুরের খড়গপুরে বিজেপির ‘শহিদ দিবস’ পালন করছেন তিনি। সোমবার খড়গপুরে ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা’র আয়োজন করেছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর প্রথম নির্বাচিত এলাকা খড়গপুরে মূলত বিজেপির আদি কর্মীদের নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “বিজেপি একুশে জুলাই শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা করছে এটা কি কোনও চমক নয়? তৃণমূল তো এতদিন এই দিনটায় নিজেদের একটা বাৎসরিক অনুষ্ঠান করে আসছে। ডিম ভাতের প্রোগ্রাম চলে। আমরা মনে করি, শহিদ তো আমাদের হয়েছে। যে শহিদদের নিয়ে এত নাটক, তারা তো কংগ্রেসের। তৃণমূলের সঙ্গে ওদের কী সম্পর্ক?” তিনি আরও যোগ করেন, “বিজেপির বহু কর্মী এই বাংলায় রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেই আজকের সভা। তবে আমার মনে হয় তৃণমূল এবার নিজেরাই শহিদ হয়ে যাবে।”
২১শে জুলাইকে ঘিরে তৃণমূল এবং বিজেপির এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিল।