ব্যুরো নিউজ ১৪ জুলাই ২০২৫ : রাজ্যে আবারও হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার অভিযোগ, হাওড়ার বাউড়িয়ায় হিন্দুরা আক্রান্ত হলেও পুলিশ ধরপাকড় করছে হিন্দুদেরই। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন তিনি। এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং বিশেষ করে হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টিকে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে এনেছে।
বাউড়িয়া কাণ্ড: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও লুটপাটের অভিযোগ
সম্প্রতি হাওড়ার বাউড়িয়ায় ঘটে যাওয়া এক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, এই সংঘর্ষে হিন্দুদের রক্ত ঝরেছে, হিন্দু শিশুকে মারধর করা হয়েছে, কিন্তু কোনো মুসলিম দোকানে হাত দেওয়া হয়নি। বরং, হিন্দুদের আনাজ লুঠ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ ও আইনি সহায়তার আশ্বাস
শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বাউড়িয়ার ৭ জন হিন্দু বীর জেলে আছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করেছি। হিন্দুদের রক্ত ঝরল। হিন্দু বাচ্চাকে মারল। একটা মুসলিম দোকানে হাত দেয়নি। আনাজ লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেন যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অমান্য করে এক ‘হিন্দু আক্রান্ত’কে জেলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “১০-১২ ঘণ্টা পর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে অত্যাচার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রবাদী আইনজীবীদের পরামর্শ দেব, উলুবেড়িয়া কোর্টে পিটিশন করুন। ওসির সঙ্গে কথা বললাম। সুপ্রিম কোর্টের বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। সুমন হিন্দু বীর, হিন্দু যোদ্ধা। চোর, ডাকাত ও ধর্ষণকারীদের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না।”
তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বিরোধী দলনেতা বলেন, “ওসিকে বলেছি, মুঘল-পাঠান আমলে শাহজাহান ছিল। সেই শাহজাহান এখন আর নেই। তদন্তকারী অফিসার শাহজাহানকে বলুন তিনি যেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে চলেন। মন্দির ভাঙা, দোকান ভাঙা হয়েছে। কোপানো হয়েছে হিন্দু শিশুকে। শাহাজাহান সাহেব ও তাঁর পার্ষদরা গরিব হিন্দুদের পেটাবেন, আর আমরা চুপ করে দেখব, তা হবে না।”
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিজেপি: আর্থিক সহায়তা ও আন্দোলনের ডাক
শুভেন্দু অধিকারী আক্রান্তদের আর্থিক সাহায্যেরও ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, “১৫ তারিখে নিম্ন আদালতে জামিন না হলে হাইকোর্টে যাব। ক্ষতিগ্রস্তরা সংসার যাতে চালাতে পারে, তার ব্যবস্থা বিজেপি পার্টির তরফে করছি। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের অর্থনৈতিক সাহায্য দিচ্ছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এর আগেও মহেশতলা, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ, মোথাবাড়িতে বিজেপি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বাউড়িয়াতেও তারা একই কাজ করেছেন। বিরোধী দলনেতা বলেন, “বিধর্মী জেহাদিদের হাতে হিন্দু মন্দির অপবিত্র হয়েছে, তার মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে বিজেপি।” তিনি এও ঘোষণা করেন যে, ১৩ তারিখে থানার সামনে বিজেপি বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
