ব্যুরো নিউজ ০৭ জুলাই ২০২৫ : পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার অধীন গৌরা সমবায় সমিতি তথা সমবায় ব্যাঙ্কে গত দু’সপ্তাহে প্রায় ২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। ব্যাঙ্কের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও অনাস্থা তৈরি হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, শাসকদল জোর করে ক্ষমতা দখল করছে এবং বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আতঙ্কের কারণ ও গ্রাহকদের বক্তব্য
গ্রাহকরা জানাচ্ছেন, ১৭ ও ১৮ জুন এই সমবায় সমিতির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক গোলযোগ হয়। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন যে, পুলিশও তাদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিয়েছে। বিগত সময়ে এই সমবায় ব্যাঙ্ক বামেদের দখলে থাকলেও, এবারের নির্বাচনে একজন বিরোধী প্রার্থীকেও মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। সিপিএমের অভিযোগ, তাদের জোটের দুই প্রার্থীকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, ব্যাঙ্কের ৫৩টি আসনেই শুধুমাত্র তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
Suvendu vs Mamata : পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবিতে রাজনৈতিক বিতর্ক !
এই ঘটনার পর থেকেই অর্থাৎ ১৯ জুন থেকে গ্রাহকরা দলে দলে নিজেদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেছেন। টাকা তুলতে আসা গ্রাহকেরা বলেছেন, “আতঙ্কে আমরা টাকা তুলে নিচ্ছি। কোন ভরসায় টাকা রাখব? যেখানে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হয়নি। মনোনয়নকে ঘিরে মারধর, অশান্তি হয়। সেখানে আমরা আমাদের টাকা কোন ভরসায় গচ্ছিত রাখব? আমাদের টাকা যে সুরক্ষিত থাকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
টাকা তোলার হিড়িক দেখে গৌরা সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সৈকত জানা বলেছেন, “এটা ঠিক যে গ্রাহকদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও অনেকেই মানছেন না। ১৯ জুনের পর থেকে শুক্রবার, ৪ জুলাই অবধি দুই কোটি টাকার বেশি তুলে নেওয়া হয়েছে।” পরিস্থিতির মোকাবিলায় ২০ জুন তারিখ থেকে সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমা ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও, কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ মানতে রাজি নন অনেক গ্রাহক।
Voter List : ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মহুয়াদের আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টের , ১০ জুলাই ফের শুনানি ।
রাজনৈতিক প্রভাব
এই ঘটনা প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর একটি স্পষ্ট উদাহরণ। যেখানে শাসকদলের প্রভাবের কারণে একটি সমবায় সমিতি থেকে গ্রাহকরা তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন, তা সামগ্রিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থা বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।