ব্যুরো নিউজ ০৭ জুলাই ২০২৫ : ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস (BRICS) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদকে মানবতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রবিবার এই সম্মেলনে পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি কড়া বার্তা দেন এবং বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস দমনে ব্রিকস দেশগুলিকে একটি স্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
পহেলগাঁও হামলা ও সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে মোদী
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’। এই হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী ব্রিকস-এর সভায় বলেন, “পহেলগাঁওতে যে হামলা হয় তা শুধুমাত্র ভারতের উপর নয়, এটি মানবতার উপর আঘাত।” তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়ে দুমুখো নীতির কোনও স্থান নেই। যদি কোনও দেশ সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে, তবে তাকে অবশ্যই এর মূল্য চোকাতে হবে।” মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে কোনো দ্বিধা করা উচিত নয় এবং সন্ত্রাসবাদের শিকার ও এর সমর্থকদের একই মাপকাঠিতে বিবেচনা করা যায় না। ব্রিকস নেতারাও পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সন্ত্রাসবাদকে তার সকল রূপে ও প্রকাশে অপরাধমূলক ও অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন।
অপারেশন সিঁদুরে ৮ F-16, ৪ JF-17 ভূপাতিত; বিপুল ক্ষতি পাক বিমান বাহিনীর
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও ভারতের পাল্টা জবাব
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আজারবাইজানে ইকোনমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে দাবি করেন যে, ভারতের এই পদক্ষেপ ছিল “আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট করার আরেকটি চেষ্টা”। এর পাল্টা হিসেবেই ব্রিকস সম্মেলনে মোদী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দেন।
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারের আহ্বান
ব্রিকস সম্প্রসারণ এবং নতুন বন্ধুদের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এটি প্রমাণ করে যে ব্রিকস সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম একটি সংস্থা। তিনি একই ধরনের ইচ্ছাশক্তির সাথে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার আনার আহ্বান জানান। মোদী বলেন যে, বিশ্বের দুই-তৃতীয়া মানুষ ২১ শতকের বাস্তবতা সত্ত্বেও ২০ শতকে প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে পর্যাপ্তভাবে প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি আরও বলেন, “এআই-এর যুগে, যেখানে প্রযুক্তি প্রতি সপ্তাহে আপডেট হয়, সেখানে একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ৮০ বছরে একবারও আপডেট না হওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিংশ শতাব্দীর টাইপরাইটার একবিংশ শতাব্দীর সফটওয়্যার চালাতে পারে না।”
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের মূল বিষয়
ব্রাজিলে ৭ থেকে ৯ জুলাই আয়োজিত ১৭তম ব্রিকস নেতা শীর্ষ সম্মেলনে শান্তি ও নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু কার্যক্রম, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয় সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। নেতারা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং বৈশ্বিক শাসন কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সম্মেলনে, ব্রিকস জোটের বর্তমান সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও নতুন সদস্য মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া এবং সৌদি আরবের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ‘এক্স’ পোস্টে ব্রিকসের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাপূর্ণ বৈশ্বিক ভবিষ্যতের প্রতি তাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।