Suvendu Adhikari Mamta Banerji Mahua Moitra

ব্যুরো নিউজ ০৭ জুলাই ২০২৫ : বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এবার এই বিতর্কের রেশ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিহারের মডেল অনুসরণ করে বাংলাতেও একই ধরনের ভোটার তালিকা যাচাইয়ের দাবি তুলেছেন। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগকে ‘NRC-র চেয়েও ভয়ানক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

শুভেন্দু অধিকারীর দাবি: স্বচ্ছতা ও অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ

 বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের বিহারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “খুব ভাল পদক্ষেপ। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে। যারা অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা উচিত। যাঁরা জাল আধার কার্ড এবং অন্যান্য পরিচয়পত্র দেখিয়ে নাম তুলেছেন, তাঁদের নাম বাতিল করা দরকার।” তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, বহু রোহিঙ্গা ভুয়ো আধার কার্ড ও বার্থ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বাংলার ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন এবং তাঁদের শনাক্ত করা জরুরি। তাঁর দাবি, “এদেশে শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদেরই ভোটার তালিকায় নাম থাকা উচিত।”

Voter List : ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মহুয়াদের আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টের , ১০ জুলাই ফের শুনানি ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ: ‘পেছনের দরজা দিয়ে NRC’

 এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ১৯৮৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জন্মানো ভোটারদের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে এবং অভিভাবকদের জন্ম শংসাপত্র পর্যন্ত জমা দিতে বলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “আসলে পেছনের দরজা দিয়ে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা এনআরসি থেকেও ভয়ানক। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলকে রুখে দাঁড়াতে হবে।” তিনি আরও জানান, এই চিঠি মূলত বিহার সরকারের কাছে পাঠানো হলেও, এর একটি কপি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও পাঠানো হয়েছে।
এইখানে একটি জনৈক প্রশ্ন উঠে আসছে – রাষ্ট্রর হিতে NRC আইন , কেন নিন্দিত তুষ্টিকরণের রাজনীতি দ্বারা ?

মহুয়া মৈত্রর উদ্বেগ: উড়িষ্যায় বাংলাভাষীদের চিহ্নিতকরণ

 তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে অভিযোগ করেছেন যে, উড়িষ্যায় বাংলাভাষীদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “মালদা, মুর্শিদাবাদ জেলার বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী শ্রমিকদের পারাদ্বীপ, কটক এবং গোটা উড়িষ্যা জুড়ে বাংলাদেশি বলে তকমা দেওয়া হচ্ছে।” তিনি বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন যে বিজেপি বাঙালিদের ভালোবাসতে পারেনি, বাঙালিদের জব্দ করতে চাইছে।

শুভেন্দু অধিকারীর রোহিঙ্গা মন্তব্য

 মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারী আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, “রোহিঙ্গা মুসলমান বর্মা থেকে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে ছিল, তারপর বাংলা শিখে টিকে বাঙালি হয়েছে, ৫৪০ কিমি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বেড়া নেই, গোটা ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এদের! স্বাভাবিক ভাবে, এদেরকেই ধরে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং বের করে দেওয়া হচ্ছে।”

Bihar : বিহারের ঐতিহাসিক ই-ভোটিং উদ্যোগ: গণতন্ত্রে নতুন দিগন্ত?

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

 কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিহারে মোট ৭.৯৬ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোটারকে ‘এনুমারেশন ফর্ম’ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর ভোট রয়েছে এমন আরও পাঁচটি রাজ্যে, যেমন অসম, কেরল, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ, একই পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা যাচাই করা হবে।

রাজনৈতিক উত্তাপ ও ভবিষ্যৎ

 এই পুরো ঘটনায়, অনুপ্রবেশকারী ও ভুয়ো ভোটারদের পক্ষে এবং বিপক্ষে এক নতুন রাজনীতি শুরু হয়েছে – রাষ্ট্রবাদ বনাম তুষ্টিকরণের রাজনীতি সরাসরি জনমতের প্রতিযোগিতায়। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, বাংলার ভোটার তালিকা থেকে যদি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম কাটা পড়ে, সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে এবং তাদের ভোটব্যাঙ্কে বড় আঘাত লাগবে। বছর ঘুরলেই ভোট, তাই নির্বাচনী আবহে ভোটার তালিকা সংশোধনে বিতর্ক রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো উত্তেজনা বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে এই বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়া নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর