ব্যুরো নিউজ ৩০ জুন: বাংলাদেশের কুমিল্লায় এক হিন্দু তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা এবং সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। অভিযুক্ত স্থানীয় বিএনপি নেতা ফজর আলীর গ্রেফতারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানের শিক্ষার্থীরা ঢাকার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
মূল অভিযুক্ত ও আটকদের পরিচয়
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তের নাম ফজর আলী, যিনি বিএনপির একজন স্থানীয় নেতা। তাকে গত রবিবার (ঘটনার পরে প্রথম রবিবার) ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন ভিডিও রেকর্ড ও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার ঘটনায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ।
কসবা কলেজে গণধর্ষণ: ধৃত টিএমসিপি সদস্য, বিরোধী দলেনেতার নিশানায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা ।
ঘটনার নৃশংস বিবরণ
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন রাতে, কুমিল্লার রামচন্দ্রপুর পাচকিত্তা গ্রামে। ২১ বছর বয়সী ওই তরুণী তার বাবার বাড়িতে স্থানীয় একটি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত ফজর আলী একটি চাকু নিয়ে তরুণীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর তাকে একটি নির্জন এলাকায় ফাঁকা ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। গোটা ঘটনার ভিডিও করে অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতাকে হুমকি দেয় যে, যদি তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন তবে তাকে প্রাণ হারাতে হবে। ঘটনার সময় কিছু স্থানীয় ব্যক্তি অভিযুক্তকে ধরে ফেললেও, সে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
আইনি পদক্ষেপ ও ভুক্তভোগীর অবস্থা
পুলিশ জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মুরাদনগর থানা তদন্ত করছে। নির্যাতিতা এখন নিরাপদ রয়েছেন এবং তার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জনতার প্রতিবাদ ও আক্রোশ
ঘটনার পরপরই মুরাদনগর এবং কুমিল্লার রাস্তায় নেমে আসে নাগরিকরা। বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্তের গ্রেফতারি এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আক্রোশ তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়েই এই তরুণীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে নিন্দা চলছে এবং ন্যায়বিচারের দাবি ক্রমশই জোরাল হচ্ছে।
খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙল ইউনূস প্রশাসন: হিন্দুদের উপর আক্রমণের নতুন দৃষ্টান্ত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বেগ
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং নেতারা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে একাধিক সভা আয়োজন করেছেন।বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পুনরাবৃত্তি এই ঘটনা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর চলমান হামলার একটি নতুন উদাহরণ। ভারত লাগাতার আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এই ধরনের হামলা ও অত্যাচারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে। চলতি বছর আমেরিকার একটি রিপোর্টেও বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হিংসাত্মক হামলার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, হিন্দুদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাকে আহমাদিয়া মুসলিমদেরও বাংলাদেশে অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, প্রার্থনাস্থল ভেঙে ফেলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়শই ঘটছে।