ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: আহমেদাবাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা উন্মোচন করেছে। ডেলয়েটের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ও রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার রেনি জশিল্ডাকে একাধিক ভারতীয় রাজ্যে ভুয়া বোমা হামলার হুমকি পাঠানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই হুমকিগুলি ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল তার প্রাক্তন প্রেমিক দিবিজ প্রভাকরকে ফাঁসানো। পুলিশের দাবি, এটি একতরফা প্রেমের প্রতিশোধ। তবে, এই ঘটনার সঙ্গে কি সত্যিই এআই ১৭৩ বিমান দুর্ঘটনার কোনো যোগসূত্র রয়েছে?
বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে রেনির যোগসূত্র
গত ১২ জুন, ২০২৫ তারিখে আহমেদাবাদের বি জে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল ভবনের উপর এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭৩ বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, যা এক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটিয়েছিল। এই দুর্ঘটনার পরপরই বি জে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনে একটি ইমেল আসে, যেখানে রেনি জশিল্ডা এই দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করেন। ইমেলটিতে লেখা ছিল, “আমি মনে করি আপনারা এখন ক্ষমতা বুঝছেন। আমরা গতকাল আপনাদের ইমেল পাঠিয়েছিলাম, আমরা আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (বিজয় রূপানি) সহ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিকে বিধ্বস্ত করেছি। আমরা জানি পুলিশ হয়তো ভেবেছিল যে বিমান দুর্ঘটনাটি একটি গুজব এবং এটিকে উপেক্ষা করেছে। আমাদের পাইলটকে ধন্যবাদ। এখন আপনারা জানেন আমরা খেলছি না। এখন আপনারা জানেন।” এই ইমেলটিই রেনিকে বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে।
ধ্বংসস্তূপের মাঝে একমাত্র আশার আলো, বেঁচে ফেরা বিশ্বাস রমেশের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা
প্রতিশোধের ছক: ভুয়া ইমেল এবং ডার্ক ওয়েব
জয়েন্ট কমিশনার অফ পুলিশ (ক্রাইম ব্রাঞ্চ) শরদ সিংঘাল নিশ্চিত করেছেন যে জশিল্ডার দিবিজ প্রভাকরের প্রতি একতরফা প্রেম ছিল। দিবিজ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ অন্য একজনকে বিয়ে করার পর রেনি প্রতিশোধের ছক কষেন। তদন্তকারীদের মতে, জশিল্ডা দিবিজ প্রভাকরের নাম ব্যবহার করে একাধিক ভুয়া ইমেল অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন এবং সেগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন জনবহুল স্থানে বোমা হামলার হুমকি পাঠিয়েছিলেন। এই হুমকিগুলি ১১টি রাজ্যের পুলিশকে উচ্চ সতর্কতায় এনেছিল এবং দেশজুড়ে সাইবার ইউনিটের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয় সাধন করতে হয়েছিল। তিনি ভিপিএন, টর ব্রাউজার এবং ডার্ক ওয়েবের মতো অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, এবং তার পরিচয় ও ডিজিটাল পদচিহ্ন গোপন করার জন্য ৮০টিরও বেশি ভার্চুয়াল ফোন নম্বর কিনেছিলেন।
এক ছোট ভুল: প্রযুক্তির জালে ধরা পড়া
শরদ সিংঘাল বলেন, “একটি ছোট ভুলের কারণেই আমরা চেন্নাইয়ে তাকে খুঁজে পাই। আমরা অনেক ডিজিটাল এবং কাগজের প্রমাণ উদ্ধার করেছি। এর মাধ্যমে আমরা একটি বড় মডিউল ফাঁস করেছি।” রেনি জশিল্ডা তার আসল এবং ভুয়া ইমেল অ্যাকাউন্ট উভয়ই একই ডিভাইস থেকে লগইন করেছিলেন, যা সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে তার আইপি ঠিকানা খুঁজে বের করতে এবং অবশেষে চেন্নাইয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সাহায্য করে।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণের চেষ্টা, আন্তর্জাতিক মহলের নজর
যাত্রীদের ভোগান্তি এবং মানসিক অস্থিরতা
রেনি নির্লজ্জভাবে এমন একটি মারাত্মক ঘটনাকে ব্যবহার করেছেন, যা অসংখ্য পরিবারকে প্রভাবিত করেছে, তার প্রাক্তন প্রেমিকের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার আবরণ হিসাবে। এআই ১৭১ ঘটনার পর ভারতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় উড়ান এবং ভারতের বাইরে থেকে আসা উড়ানগুলিতে বেশ কয়েকটি বোমা হুমকির কারণে বাতিল করা হয়েছিল, যার ফলে ভ্রমণকারীদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল যারা তার ব্যক্তিগত প্রেমের জীবনে জড়িত নন। যদিও মনে হচ্ছে রেনি মানসিকভাবে অস্থির, তার দুর্দশা তাকে অপরাধমূলকভাবে উন্মাদ এবং পরবর্তীতে একজন সমাজবিরোধী বানিয়েছে।
