ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ফরেন অ্যাফেয়ার্স রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (ICBM) তৈরি করছে। এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান থেকে সরাসরি আমেরিকায় আঘাত হানতে সক্ষম বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ওয়াশিংটনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। একই সাথে, এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পেছনে চীনের ভূমিকা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আমেরিকার কড়া বার্তা: “প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখবে ইসলামাবাদকে”
ওই রিপোর্টে আমেরিকার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তান যদি সত্যিই এমন মিসাইল তৈরি করে, তাহলে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদকে সরাসরি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখবে। পরমাণু শক্তিধর যেকোনো দেশই আমেরিকার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ। বর্তমানে রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া এই তালিকায় রয়েছে। এতদিন পাকিস্তান দাবি করে এসেছে যে তাদের পরমাণু কার্যক্রম শুধুমাত্র ভারতকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। কিন্তু এই নতুন রিপোর্ট আমেরিকার জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা আমেরিকায় আঘাত হানতে সক্ষম।
অপারেশন সিঁদুরে ৮ F-16, ৪ JF-17 ভূপাতিত; বিপুল ক্ষতি পাক বিমান বাহিনীর
চীনের সহায়তা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকেই চীনের সহায়তায় পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র সরঞ্জাম কার্যক্রম নিয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট ঘিরেও সেই একই প্রশ্ন উঠছে। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি কেবল চীনের DF17 (ডংফেং 17) হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভিত্তিতে তৈরি হতে পারে, যেমনটি তাদের অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চীনের প্রযুক্তি বা সহায়তায় তৈরি হয়েছে।
সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত ও ইসরায়েল কেন্দ্রিক সংঘাতের কারণে একটি নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানকে আমেরিকার কাছে যুদ্ধবিরতির সাহায্য চাইতে হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। এই বৈঠকে, অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের বিপুল ক্ষতির তালিকা ট্রাম্পের কাছে পেশ করা হয়, যার মধ্যে পাক-মার্কিন মৈত্রীর কিছু যুদ্ধ সামগ্রীর (যেমন জিই-এর তৈরি স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ন্যাটো বাঙ্কার, F16 যুদ্ধবিমান, পারমাণবিক রসদ ইত্যাদি) উল্লেখ ছিল।
এই মুহূর্তে পাকিস্তানের এই সামরিক পরিকাঠামো পুনর্গঠন করতে সরাসরি মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন – আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই। কিন্তু পাকিস্তানের উপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ভরসা পাচ্ছে না। যদিও ভারত-রাশিয়া মৈত্রীর মধ্যে পার্থক্য আনতে মার্কিন এবং চীনের যোগসাজশ রয়েছে, সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান উভয় দেশের কাছেই পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারছে না। তাই চীন এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে কোনো আধুনিক প্রযুক্তি দিতে নারাজ – সে DF17 ICBM হোক বা সাম্প্রতিককালে খবরে থাকা JF35 পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হোক।
JF35 যুদ্ধবিমান নিয়ে বিভ্রান্তি ও পাকিস্তানের সামরিক সংকট
ভারতের কাছে সামরিক দক্ষতায় পরাস্থ হওয়ার পর পাকিস্তান দিশেহারা অবস্থায় পড়ে। এই সময়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রবল দাবি উঠেছিল যে চীন তাদের দ্রুত JF35 বিমান পাঠাচ্ছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। তবে, সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বৈঠকের পর এই গোটা পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে চীন। চীনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তাদের JF35 বিমান এখনো তৈরি হয়নি এবং এটি কাউকে দেওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ অলীক। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনা সচিবও জানিয়েছেন যে এটি একটি ভুয়া খবর এবং পাকিস্তানের এই মুহূর্তে JF35 নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এই ঘটনা পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা এবং চীনের সাথে সম্পর্কের জটিলতাকে স্পষ্ট করে তোলে।
ইরান ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব
ইদানীং দেখা গেছে যে চীনের মিত্র ইরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান পরোক্ষভাবে মার্কিন এবং ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে। ইরানকে দেওয়া পারমাণবিক প্রতিশ্রুতিকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিজের ভূমি থেকে মার্কিন যুদ্ধবিমানকে সহায়তা করে যাচ্ছে, ইরানের পূর্ব সীমান্তে।
এই প্রেক্ষাপটে, পাকিস্তানের দূরপাল্লার মিসাইল তৈরির খবরটি এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে চীনের সহায়তায় অস্ত্র তৈরি করে আবার চীনেরই বিরোধিতা করা, এবং অন্যদিকে মার্কিনিদের সাহায্য করে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় তাদেরই নিয়ে আসা—পাকিস্তানের এই কৌশলগত অবস্থান আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ভারতের প্রতি তাদের বিদ্বেষ শেষ পর্যন্ত একটি বিশ্ব সংকটের জন্ম দিতে পারে, যেখানে সম্ভবত পাকিস্তানের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পটি অসমাপ্তই থেকে যাবে।