নিজস্ব সংবাদদাতা ২৭ জুন: রথযাত্রা—এক ধর্মীয় উৎসব যা প্রতিবার আষাঢ় মাসে উজ্জ্বল সূর্যের তাপে এবং লক্ষ লক্ষ ভক্তের হৃদয় জয় করে ফিরে আসে। এই উৎসবের পেছনে আছে হাজার বছরের প্রাচীন এক ইতিহাস, যা জড়িয়ে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে।
রথযাত্রা প্রচলনের ইতিহাস
রথযাত্রা প্রচলনের ইতিহাস শুরু হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে, ওড়িশা রাজ্যে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, প্রায় ১০৭৮ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাবংশীয় রাজা চোড়গঙ্গদেব জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন এবং তখন থেকেই জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার জন্য বিশাল রথ নির্মাণ করে ‘রথযাত্রা’ উৎসব পালনের সূচনা হয়। যদিও অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এর গোড়ার ইতিহাস আরও পুরনো—বৈদিক যুগের “অশ্বমেধ যজ্ঞ” এবং “রথ” শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় রীগ বেদে , যা বোঝায় এক ঐশ্বরিক যানবাহন।
শ্রীক্ষেত্র পুরীর রথযাত্রা: ভক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও মানবতার এক মহাযাত্রা
বিশ্বজুড়ে রথযাত্রার প্রসার
পুরীর রথযাত্রা শুধু ভারতের মধ্যেই নয়, আজ তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, রাশিয়া এবং বাংলাদেশেও প্রতি বছর এই উৎসব পালিত হয়। মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে, বিশেষ করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময়ে, রথযাত্রা উৎসব নতুন মাত্রা পায়। তিনি নিজেই বহুবার পুরীর রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এবং বলেন, “জগন্নাথের রথ মানেই কৃষ্ণের কাছে ফিরে যাওয়ার পথ।” এটি মূলত ইস্কন (ISKCON)-এর প্রচেষ্টায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতিতে রথযাত্রা
বাংলা সাহিত্যে রথযাত্রার বর্ণনা পাওয়া যায় মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায়। এমনকি গ্রামীণ বাংলার মেলার সংস্কৃতিতেও রথযাত্রা এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রথের মেলা বাঙালির জীবনে আনন্দ ও উল্লাসের এক বিশেষ বার্তা নিয়ে আসে।
আজকের রথযাত্রা: কলকাতার বুকে ঐতিহ্য ও আনন্দের মেলা !
রথযাত্রার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য
এই রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক সামাজিক উৎসব, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভুলে সবাই একত্র হয়। হাজার হাজার মানুষের সমবেত টানেই তিনটি বিশাল কাঠের রথ এগিয়ে চলে গণ্ডিচা মন্দিরের দিকে। এখানেই লুকিয়ে আছে রথযাত্রার এক অপার সৌন্দর্য—ভক্তি, ঐক্য, এবং অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন। রথযাত্রা এই বার্তা দেয় যে, ঈশ্বর মন্দিরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, তিনি সর্বজনীন এবং সকলের কাছেই তিনি সহজে দৃশ্যমান।
– লেখক মিঠুন