ব্যুরো নিউজ ২৪ জুন : আজ, বুধবার, ভারতীয় গণতন্ত্রের “কালো অধ্যায়” হিসেবে পরিচিত জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এক সেমিনারের উদ্বোধন করেন। সংবিধান দিবসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দগুলি যোগ করা ভারতের আত্মার পরিপন্থী ছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, কংগ্রেস দলের দলিত, বঞ্চিত এবং দেশের সমস্ত দেশবাসীর কাছে জরুরি অবস্থার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।
কংগ্রেসের সমালোচনা ও আম্বেদকরের সংগ্রাম:
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “বাবা সাহেব আম্বেদকর যাদের জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই দলিত ও বঞ্চিতদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস।” তিনি অভিযোগ করেন যে, কংগ্রেস দল আম্বেদকর দ্বারা সংবিধানের মাধ্যমে দেওয়া অধিকারগুলিকে দমন করতে চেয়েছিল।
‘লোকতান্ত্রিক সেনানী’দের জন্য বিশেষ ঘোষণা:
এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জরুরি অবস্থার সময় জেলে যাওয়া ‘লোকতান্ত্রিক সেনানী’ (গণতন্ত্র যোদ্ধা) এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নগদবিহীন চিকিৎসার ঘোষণা করেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘অতুলনীয় সাহস’-কে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর প্রয়াণ দিবসে ।
বিরোধী দলগুলির নীরবতা ও দ্বিচারিতা:
যোগী আদিত্যনাথ সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং আরজেডি-কে (রাষ্ট্রীয় জনতা দল) তাদের সংবিধান দিবসে সামাজিক মাধ্যমে কোনো বিবৃতি না দেওয়ার জন্য তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই দুটি দলের বরিষ্ঠ নেতারা একসময় কংগ্রেসের সংবিধানকে গলা টিপে ধরার কাজের বিরুদ্ধে এবং কংগ্রেসের স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু আজ, একই ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থের জন্য কংগ্রেসের সামনে মাথানত করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, “এই লোকেরা গণতন্ত্র ও সংবিধানের কথা বলে, কিন্তু যারা সংবিধানকে গলা টিপে ধরেছিল এবং বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরকে অপমান করেছিল, তাদেরও সমর্থন করে। এই দ্বিচারিতা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
পারিবারিক দলগুলির সমালোচনা:
মুখ্যমন্ত্রী যোগী বলেন যে, কংগ্রেস, এসপি এবং আরজেডি-র মতো পারিবারিক দলগুলির সংবিধানের জন্য কান্নার কোনো অধিকার নেই। যখনই এই দলগুলি সুযোগ পেয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে গলা টিপে ধরার কাজ করেছে।
গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় আহ্বান:
তিনি বলেন যে, এই দিনটি এমন ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন করার সুযোগ দেয়, যারা গণতন্ত্রের আড়ালে নিজেদের স্বার্থের জন্য ভারতের মূল্যবোধ ও আদর্শকে বিসর্জন দেওয়ার দুঃখজনক চেষ্টা করেছে। তাঁর অভিযোগ, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি এবং তাদের সহযোগীরা একই পথ অনুসরণ করছে।
জরুরি অবস্থার বর্ণনা ও কংগ্রেসের ‘পাপ’:
যোগী আদিত্যনাথ স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন, কংগ্রেস দল আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগের অধিকারগুলি কেড়ে নিয়ে তাদের বন্দী করেছিল। সেন্সরশিপের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হয়েছিল। সেই সময়েও অনেক মানুষ গণতন্ত্রের জন্য এবং ভারতের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছিলেন। এক লক্ষেরও বেশি গণতন্ত্র যোদ্ধা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং গণতন্ত্র বাঁচাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ লড়াই করেছিলেন।যোগী বলেন যে, ২৫শে জুনে কংগ্রেস এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে ‘পাপ’ করেছিলেন, তা কখনো ভোলা যাবে না। তিনি আরও কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন, যেমন: ১৯৫২ সালে বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরকে দেশের সংসদে পৌঁছাতে না দেওয়া, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা, ১৯৮৪ সালে শিখদের হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কর্তৃক সংসদে একটি অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও গণতন্ত্র যোদ্ধাদের সম্মাননা:
এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী ‘ট্র্যাজেডি অফ দ্য ইমার্জেন্সি’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই প্রদর্শনীতে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার কর্তৃক গণতন্ত্র যোদ্ধাদের ওপর চালানো নির্যাতন এবং তাদের সংগ্রামের চিত্র সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ এবং চিত্রকলার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। কিছু ‘লোকতান্ত্রিক সেনানী’ জরুরি অবস্থার সময় তাদের উপর হওয়া নির্যাতনের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী ২৬ জন গণতন্ত্র যোদ্ধাকে সম্মান জানান।