ব্যুরো নিউজ ২৫ জুন : ২২শে জুন, ২০২৫ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতানজ এবং ইসবাহান – এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল উভয়ের দাবি ছিল যে, এই স্থাপনাগুলো গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন যে, এই সামরিক হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে “সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন” করে দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও ট্রাম্পের এই দাবির প্রতিধ্বনি করেন।
গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিন্ন চিত্র
তবে, পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (DIA)-এর একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন রিপোর্ট সোমবার (২৪শে জুন, ২০২৫) প্রকাশ করা হয়েছে, যা ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে। এই গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে মার্কিন হামলা “সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন” করতে পারেনি, বরং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ফোর্দো, নাতানজ এবং ইসবাহান পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলেও, সেগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পরিচিত দুজন ব্যক্তি সিএনএনকে জানিয়েছেন যে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়নি। একজন ব্যক্তি আরও বলেছেন যে, সেন্ট্রিফিউজগুলো মূলত “অক্ষত” রয়েছে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে যে, মার্কিন হামলার আগেই ইরান এই স্থানগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল। এই সূত্র মতে, “DIA-এর মূল্যায়ন হল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি) বড়জোর কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।”
ফোর্দোর গভীর ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্টের প্রবেশপথ ধসে গেছে এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে, যা মেরামত করতে সময় লাগবে। তবে, ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো ধ্বংস হয়নি বলে একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পূর্ববর্তী মূল্যায়নগুলি ফোর্দো-তে এমন পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল।
হোয়াইট হাউসের তীব্র প্রতিক্রিয়া: ‘সম্পূর্ণ ভুল’ মূল্যায়ন
হোয়াইট হাউস এই গোয়েন্দা মূল্যায়নের দাবিকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটিকে “সম্পূর্ণ ভুল” বলে অভিহিত করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই কথিত মূল্যায়ন ফাঁস করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিশ্চিহ্ন করার জন্য নিখুঁতভাবে অভিযান পরিচালনা করা সাহসী ফাইটার পাইলটদের অসম্মানিত করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা।” তিনি আরও যোগ করেন, “যখন আপনি চৌদ্দটি ৩০,০০০ পাউন্ডের বোমা নিখুঁতভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করেন, তখন কী হয় তা সবাই জানে: সম্পূর্ণ ধ্বংস।”
স্টেলথ বোমারু বিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং এফ-১৬: ইরান অভিযানে যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্পের পাল্টা আক্রমণ: ‘ফেক নিউজ’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টগুলোকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেগুলোকে “ফেক নিউজ” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লিখেছেন, “ফেক নিউজ সিএনএন, ব্যর্থ নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাথে মিলে ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক হামলাকে হেয় করার চেষ্টা করছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে! টাইমস এবং সিএনএন উভয়ই জনগণের দ্বারা সমালোচিত হচ্ছে!”
সব মিলিয়ে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্টের দাবির মধ্যে এক স্পষ্ট সংঘাত চলছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে আরও আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।